শরীরকে সুস্থ এবং সতেজ রাখার নামই হলো স্বাস্থ্য এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অঙ্গ হলো কিডনি। মানুষের শরীরে দুটি কিডনি, শিরদাঁড়ার হাড়ের দুপাশে অবস্থান করে। এই কিডনির প্রধান কাজ হলো, দেহের মধ্যে থাকা রক্তকে পরিষ্কার করে। এক কথায় ঠিক ছাঁকনির কাজ করে। মানুষের শরীরে দূষিত জীবাণু নানাভাবে প্রবেশ করে রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করে। রক্তের ভেতর যেসব বিষাক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থ থাকে সেগুলোকে মূত্রের মধ্য দিয়ে বাইরে বার করে দেয় এবং পরিষ্কার রক্ত আবার ফেরত পাঠায় শরীরে।
কিডনি শরীরের জলীয় পদার্থকেও নিয়ন্ত্রণ করে। একজন সুস্থ মানুষের শরীর থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ লিটার মূত্র বের হয় এবং সেই মূত্রের সঙ্গে শরীর থেকে যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। এছাড়াও কিডনির অন্যান্য কাজের মধ্যে আছে লাল রক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করা এবং লোহিত রক্ত কনিকার প্রোটিনকে বাইরে বেরিয়ে না আসতে সাহায্য করা। কিভাবে কিডনির সমস্যার সহজ সমাধান করা যায় এবার বিস্তারিত ভাবে জেনে নেবো।
Table of Contents
কিডনিতে পাথর হয় কেন ?
১) কাঁচা লবণ খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি থাকে। যেহেতু কাঁচা লবণ অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম থাকে।
২) প্রত্যেকদিন ২ বা ৩ লিটার জল খেতে হবে কারণ শরীর সুস্থ রাখার জন্য এই পরিমান জল আমাদের শরীরের দরকার।
৩) দীর্ঘক্ষন মূত্র চেপে রাখলে।
৪) শরীরে কোনো ব্যথা হলে হুটহাট এলোপ্যাথিক ব্যথার ওষুধ খাওয়া কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ।
আরো পড়ুন: 2021 টাকা জমানোর সবচেয়ে ভালো উপায়
কিডনি রোগের লক্ষন
১) মূত্রের সমস্যা বা মূত্রের পরিবর্তন, মূত্র বেশি হয় বা কমে যায়, রাতের দিকে সমস্যা বাড়ে। মূত্রের রং গাঢ় হয়। মূত্রের সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে।
২) কিডনির সমস্যা দেখা দিলে শারীরিক পরিবর্তন আসে যেমন পা ফুলে যায় সাথে চোখের পাতা এবং মুখটাও ফুলে যায়।
৩) এই সময় শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মুখে ফুসকুড়ি উঠতে পারে আর চুলকানি হতে পারে।
৪) খাদ্যের স্বাদ বদলে যায় এবং মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। খাদ্যের প্রতি অনীহা তৈরি হয় এবং ওজন কমে যায়।
৫) মাথা ঘোরা এমনকি কোন জিনিস ভালো লাগে না।
৬) পিঠের দুপাশে মাঝে মাঝে বেথা অনুভব হবে।
আরো পড়ুন: যোগের ২০টি উপকারিতা, ওজন কমাতে যোগার উপযোগিতা
ক্রনিক কিডনি রোগের লক্ষণ
১) ব্লাড প্রেসার অনেক বেড়ে যায় এবং যাদের ব্লাড প্রেসার নেই তাদেরও ব্লাড প্রেসার দেখা দেয়। ব্লাড প্রেসার এতটাই বেড়ে যায় যে চোখের সমস্যা দেখা দেয়।
২) ব্রাশ করার সময় বমি বমি ভাব এমন কি খাবার প্রতি অনীহার সৃষ্টি হয়।
প্রতিকার
এই রোগের নির্দিষ্ট কোন কারণ না থাকার জন্য কি কারনে হচ্ছে সেটি ধরে ফেলা খুবই জরুরী।ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণে হলে ডায়াবেটিস কমানো। ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে সেটা কমানো। কিছু ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে।
কিডনি পরিশ্রুত করার ঘরোয়া উপায়
১) ১০০ গ্রাম ধনেপাতা প্রথমে ১০ মিনিট নুন জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। ২ গ্লাস কিংবা হাফ লিটার জল দিয়ে হালকা আঁচে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর একটি গোটা লেবু টুকরো টুকরো করে কেটে খোসা সমেত ধনেপাতার জলটায় দিয়ে দিন।
এখন ওই পানীয়টার সাথে এক চামচ গোটা জিরে মিশিয়ে দিন। আরো ৫ থেকে ৭ মিনিট এইভাবে ফুটিয়ে নিন। অবশ্যই ঢাকনা দিয়ে ঢেকে এটাকে বানাতে হবে। হালকা পানীয়টাকে ঠান্ডা হতে দিন তারপর সেবন করুন। এটি হালকা গরম খেতে হবে অবশ্যই খালি পেটে। মাসে দুইবার এই পানীয় সেবন করুন।
২) নিয়মিত এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেলে কিংবা আদা বাটার রস করে খেলে কিডনি পরিশ্রুত হয়।
৩) সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলেও খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।
৪) ২৫০ গ্রাম জলে খুব পাতলা করে আদা কেটে নিয়ে ৪ বা ৫ টুকরো আর একটুখানি পাতিলেবুর রস দিয়ে পানীয়টিকে সাথে সাথে গ্রহণ করুন।
আরো পড়ুন: মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার ৭ টি উপায়
কিডনির ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
শুকনো তুলসীপাতা ২০ গ্রাম, পরিষ্কার জোয়ান ২০ গ্রাম, সৌন্ধব লবণ ১০ গ্রাম তিনটিকে একসঙ্গে গুঁড়ো করে চূর্ণ করে নিন। সকালে ও সন্ধ্যায় প্রতিদিন ২ বিরামপুরে ঈষৎ উষ্ণ জলের সঙ্গে সেবন করে নিন। প্রথম মাত্রার সেবনেই বৃক্কের ব্যথায় কষ্ট পাওয়া রোগী আরাম বোধ করে। প্রয়োজনমতো এক-দু’দিন সেবন করতে হবে। এই টোটকা টি সেবনকালে ভাত ও পালং শাক খাওয়া বন্ধ রাখবেন।
কিডনি রোগীদের কি কি খাওয়া উচিত
১) আপেল – আপেল খেলে শুধুমাত্র কিডনি ভালো থাকে তা নয় ব্রেন ও ভালো থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। আপেলে থাকে ভিটামিন সি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো রাখতে আপেলের জুড়ি মেলা ভার।
২) রসুন – শুধুমাত্র রান্নার খাবারের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে না রসুন, কিডনিও ভালো রাখার ক্ষেত্রে রসুনের ভূমিকা অসাধারণ। কিডনি ফেইলিওরের লক্ষণ যেমন রেলাল রেফরফিউজন ইনজুরির সাথে লড়াই করে।
৩) হলুদ – কিডনিকে সুস্থ রাখতে রোজ খাবার পাতে কাঁচা হলুদ খান।
৪) গাজর – গাজর কিডনির জন্য এক অপরিহার্য অসাধারণ ঘরোয়া টোটকা। শরীরের রক্তাল্পতা দূর করে, চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে। গাজর ভিটামিন সি এ ভরপুর। কিডনি থেকে টক্সিনস বাইরে বার করে দেয়। গাজরে থাকে পেক্টিন যা কিডনি ফেইলিওরের হাত থেকে রক্ষা করে।
৫) আদা – কিডনিকে আরও কার্যকরী করতে আদা খুবই উপকারী। কিডনিতে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে কিডনিকে সতেজ রাখে।
আরো পড়ুন: ওজন কমানোর ৫ টি সেরা Health Drinks
কিডনি রোগীদের কি কি খাওয়া উচিত না
১) বেশি পটাশিয়াম যুক্ত সবজি যেমন – আলু, কাঁচকলা, গাজর, ডাঁটা শাক, কাঁচা পেঁপে, পুঁইশাক, সজনে, কলার মোচা, টমেটো, করলা।
২) বেশি পটাশিয়াম যুক্ত ফল যেমন –আম, জাম, লিচু, কলা, নারকেল, আমড়া, কামরাঙ্গা, আমলকি, আনার, ডাবের জল, আঙ্গুর, কাঁঠাল, কমলা, লেবু।
৩) বেশি পিউরিন যুক্ত খাবার – গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, মাছের ডিম, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ, শুটকি মাছ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, কচু, বেগুন।
৪) সোডিয়াম বা লবন জাতীয় খাবার – বেকিং পাউডার, হার্ড ড্রিংস, পপকর্ন, বাদাম, আচার, সফট ড্রিংস, ড্রাই ফ্রুটস, সবজি, মুড়ি, চানাচুর এবং কাঁচা লবণ।
কোমরের ব্যথা ও কিডনির ব্যথার মধ্যে তফাৎ
১) কোমরের ব্যথা ধীরে ধীরে নিচে নামবে এবং পায়ের দিকে চলে যাবে। কিন্তু কিডনির ব্যথা কখনোই পায়ের দিকে যাবে না।
২) কোমরের ব্যথা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয় মাঝে মাঝে কমে যাবে আবার কখনো খুব বেশি ব্যথা হবে একটানা ব্যথা থাকবে না। কিডনির ব্যথা কিডনি ভালো না হওয়া পর্যন্ত থাকবে। এই ব্যথা হবে চিনচিনে বা জমে থাকা ব্যাথার মত।
৩) তরল জাতীয় দ্রব্য খেলে কোমরের ব্যথা বাড়েনা কিন্তু কিডনির ব্যথায় তরল জাতীয় দ্রব্য সেবনে বেড়ে যায়।