বাস্তু মেনে বাড়ি সাজিয়াছেন? না হলে আসতে পারে বিপদ। রইলো বিপদ এড়ানোর ১০ রকম উপায়

Share It!

নতুন বাড়ি কিনেছে রাই। এই মূল্যবৃদ্ধির জীবনে একটু নিজের মাটি পাওয়াটাই যে কতবড় প্রাপ্তি! একতলা ছোট্টো বাড়িটাকে মনের মতো করে সাজিয়ে তুলছিল একটু একটু করে। কিন্তু,কিছুদিন যেতে না যেতেই অভিশাপের মতো দূর্ঘটনা এগিয়ে আসতে থাকল একের পর এক। ইনসোমনিয়া রোগ হল,হল শ্বাসকষ্ট‌ও। ইনহেলার সঙ্গী হল তার। প্রাণোচ্ছল ঝলমলে মেয়েটা রোগের ডিপো হয়ে গেল। চাকরিতে ও তার তথৈবচ অবস্থা। অর্থাগম নিম্নগামী হতে শুরু করল।

ডাক্তারবদ্যি সকলের পরামর্শ শুনে শেষ‌অব্দি বাস্তুশাস্ত্রীর কাছে পৌঁছালো রাই। সেখানে গিয়ে তো সে অবাক। বাস্তু না মেনে ঘরে এদিক ওদিক মুখোশের শোপিস, সিন্থেটিক পেইন্ট করিয়ে এখন বাস্তুদোষের শিকার রাই। 

এবার,আপনার ঘরের চারদিকে একবার চোখ মিলিয়ে নোট করে নিন,বাস্তু মেনে স্বাস্থ্য সম্মত বাসস্থান কি করে বানাবেন নিজের বাড়িটিকে।

বাস্তু কি?

নির্মাণ শিল্পের বিজ্ঞানকেই বাস্তু বলা যেতে পারে। যেমন ধরুন বাড়ি বা অফিসে কোন জিনিস কীভাবে রাখা হবে বা কোথায় রাখা হবে, তার উপর নির্ভর করে ভালো ও খারাপ শক্তি নির্গত হয়। বাস্তুশাস্ত্র এমন এক শিল্প, যার মাধ্যমে এই ভালো ও খারাপ শক্তির মধ্যে সমতা রক্ষা করা যায়।

আরো পড়ুন: ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট, লিভার ভালো রাখার উপায়

বাস্তুশাস্ত্রের মূল বিষয়

বাস্তুশাস্ত্রজ্ঞরা যে মূল চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে শুভ-অশুভ নির্ধারণ করে থাকেন, তা হল

ইমারত যে শহরে নির্মাণ করা হবে, নক্ষত্র অনুসারে তার উপযোগিতা

  • দিক নির্ণয়
  • মাটি
  • দিনক্ষণ 
  • বাস্তু পুরুষের অবস্থান অনুসারে নক্ষত্রের বিচার

জমি-বাড়ির বাস্তুসম্মত ব্যবহারিক নির্দেশ

জমি কিনে বাড়ি তৈরির সময় এই বিষয়গুলি অবশ্য‌ই মাথায় রাখবেন।

Read More:  আপনি কি মাঝে মাঝে ভুলে যাচ্ছেন ? স্মৃতিশক্তিকে বাড়াতে এই কাজ গুলো অবশই অনুসরণ করুন।

১. জমির আকার বর্গক্ষেত্র বা আয়তক্ষেত্র হওয়া বাঞ্ছনীয়। খুব ভালো হয় যদি জমি বর্গাকৃতির হয়। 

২. বিষম আকৃতির জমি সর্বদা পরিহার করুন। যেমন: ডিম্বাকৃতি,ষড়ভূজাকার, ত্রিকেণাকৃতি, অর্ধচক্রাকার ইত্যাদি।

৩. জমির ইতিহাস জেনে নিন। আগে কোনো পশু বা মানুষের কবরখানা ছিল কিনা। অথবা মাটিতে শল্যদোষ রয়েছে কিনা।

৪. বাড়ির চারদিকে রাস্তা থাকা সবচেয়ে ভাল। তিনদিকে রাস্তাও ভাল। তবে কমপক্ষে দুদিকে রাস্তা থাকা ভাল অবশ্য দিক দুটি উত্তর, দক্ষিণ হওয়া চাই। 

৫. জমির উত্তর পূর্ব দিক খোলা থাকা উচিত। উত্তর পূর্বদিকে জলাশয় থাকা উত্তম। জমির দক্ষিণ পশ্চিমদিকে উচুঁ গাছ, বড় বাড়ি, পাহাড় বা টিলা থাকলে ভাল।

আরো পড়ুন: PPF Account এর ১১ রকমের সুবিধা, অসুবিধা

বাড়ির প্রবেশদ্বার

বাড়িতে উত্তর বা পূর্বমুখী প্রধান প্রবেশদ্বার রাখলে ভালো। বাড়ির প্রধান প্রবেশদ্বার নির্ভর করে জমির কোন দিকে রাস্তা আছে তার উপর।

যদি আপনার বাড়ির সামনের রাস্তা উত্তর ও পূর্বে না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বাড়ির প্রবেশদ্বার বসানোর জন্য প্রতিটি দিককে সমান ৯ ভাগে ভাগ করে বাঁদিকে থেকে ৩ ভাগ বাদ দিয়ে চতুর্থ ভাগে প্রধান প্রবেশদ্বার বসাতে হবে।

ঘরের জানালার স্থান 

বাস্তুশাস্ত্র মতে জানালা বসাবার উপযুক্ত স্থান- 

(ক) পূর্বদিক 

(খ) উত্তরদিক 

(গ) উত্তর-পূর্বের পূর্বদিক 

(ঘ) উত্তর-পূর্বের দিক 

(ঙ) উত্তর-পশ্চিমের উত্তর দিক 

(চ) উত্তর-পশ্চিমদিক 

(ছ) দক্ষিণ দিক।

এছাড়াও বাড়ির জানালা এমনভাবে বসান যাতে ‘ক্রস ভেন্টিলেশন’ বা আড়াআড়ি আলো-বাতাস চলাচল করে।

আরো পড়ুন: Meditation এর উপকারিতা, কৌশল, সময়

বাড়ির রান্নাঘর

আপনার বাড়ির রান্নাঘর হওয়া উচিত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। কোন কারণে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রান্নাঘর করা সম্ভব না হলে বাড়ির উত্তর পশ্চিম দিকে রান্নাঘর করা যেতে পারে। 

তবে কোন মতেই বাড়ির উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম বা ব্রহ্মস্থলে করা উচিত নয়। রান্নাঘরের পূর্বদিকে জানালা রাখা ভালো।এতে রান্নায় জীবানু দোষ কম হয়।

Read More:  [FAST FOOD] জাঙ্ক ফুড শরীরে কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে - জানুন ৯টি সমস্যা

আরো পড়ুন: Lockdown বাড়ি থেকে Online অর্থ উপার্জন করার উপায়

শোবার ঘর

শোবার ঘর হ‌ওয়া উচিৎ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। এবং শোবার ঘরের দরজা থাকবে উত্তর পূর্ব দিকে। খাট দক্ষিণ-পশ্চিমের দেওয়াল থেকে কম পক্ষে তিন ইঞ্চি দূরে রাখতে হবে। এবং শোওয়ার সময় যেন মাথা কোনোমতেই উত্তর দিকে না থাকে।

ঘরে কমকরে বড়বড় তিনটি জানালা রাখুন।দক্ষিন মুখী জানালা সবচেয়ে ভালো।এতে আরো বাতাসের চলাচল হবে বেশী।

স্নানঘরের অবস্থান 

বাড়িতে বাথরুম হ‌ওয়া উচিৎ একদম কোনের দিকে।সদর খুলে যেন বাথরুম দেখা না যায়। আপনার বাড়ির স্নানঘরের অবস্থান হ‌ওয়া উচিৎ পশ্চিম, দক্ষিণ, উত্তর-পশ্চিম দিকে। শৌচাগারের কমোড বা প্যান উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বসাতে হবে।

আরো পড়ুন: রথযাত্রা উৎসব – জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব, রথযাত্রার ইতিহাস

বাড়ির আসবাবপত্র 

আয়না খুব সাবধানে রাখতে হয় বাড়িতে। আয়না রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। আয়না রাখার আদর্শ জায়গা পূর্ব বা উত্তরের দেওয়াল। কোনমতেই দক্ষিন-পশ্চিম বা দক্ষিণ দেওয়ালে বড় আয়না টাঙানো যাবে না।

দেওয়াল ঘড়ি পারলে পূর্বদিকে টাঙান তবে দক্ষিন দিকে নৈব নৈব চঃ। 

সোফাসেট বসার ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ বা পশ্চিম দেওয়ালে রাখা উচিত।

প্রধান আলমারী ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিমে খাটের পাশে রাখতে হবে, যেন আলমারী মুখ থাকে উত্তর দিকে গৃহকর্তার টাকা পয়সা দরকারি কাগজ-পত্র ওই আলমারীতেই রাখুন। 

অন্যান্য সতর্কতা

এ তো গেল বাড়ির বাস্তুর বিষয়। এবার কিছু ঘর সাজানোর বিষয়ে সতর্কতা জেনে নিন।

১. ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে কখোনোই মোটা কার্পেট ব্যবহার করবেন না।ধুলো ময়লা জমলে জীবানুর বাসা হবে।

২. ঘরে সিন্থেটিক পেইন্ট ব্যবহার না করলেই ভালো।এতে ঘরে বাতাস কম হতে থাকে,ঘর বদ্ধ ঠাহর হয়।

৩. ঘরে পেট্রোকেমিক্যাল ও চুম্বকীয় সামগ্রী রাখা থেকে বিরত থাকুন।এতে শরীরের ক্ষতি হয়।উচ্চ কম্পাঙ্কের আশেপাশে থাকলে মাথা ধরা,অনিদ্রা প্রভৃতি রোগের সম্ভাবনা বেশী হয়।

Read More:  Stress: স্ট্রেস এবং টেনশন কমানোর ১৪টি সহজ উপায়

৪. যা খুশি তাই মুখোশ দিয়ে ঘর সাজাবেন না।ঠাকুর দেবতার মুখোশ ঠিকাছে,শৈল্পিক মুখোশ ও চলবে,তবে রাক্ষস খোক্ষসের মুখোশ অপদেবতা কে আহ্বান জানায়।

৫. বাড়িতে যত বেশী সম্ভব গাছ রাখুন। মন ও স্বাস্থ্য উভয়েই ভালো থাকবে। উপরিউক্ত বস্তুর কুপ্রভাব কাটাতে সাহায্য করবে।পিসলিলি,রবার,গোল্ডেন পথস, ফিকাস গাছগুলি শোভাবর্ধন ও করবে আবার উপাদেয়‌ও বটে।

৬. বাড়িতে তুলসীগাছ রাখুন। বেশ কিছুটা উঁচুতে মঞ্চ করে তুলসী গাছ লাগিয়ে প্রত্যহ জল দিন। শাস্ত্রমতে তুলসীকে লক্ষ্মীর অবতার বলা হয়। তবে বাস্তুতে কখনোই মরা তুলসী গাছ রাখা চলবে তা। তা খুবই অমঙ্গলজনক বা অশুভ।

তবে আর কি! আজ‌ই মিলিয়ে ফেলুন আপনার বাড়ি ও ঘরের সমস্ত আসবাব বাস্তুমেনে রয়েছে কিনা।

আরো পড়ুন: কিডনিতে পাথর কেন হয়? কিডনি পরিশ্রুত করার ১০ টি ঘরোয়া উপায়

আরো পড়ুন: ঘরোয়া উপায়ে ত্বককে করুন স্বাস্থোজ্জ্বল, মসৃণ – ১৩ রকমের ঘরোয়া টিপস

Leave a Comment