আমাদের সৌন্দর্যের প্রায় ৫০% নির্ভর করে চুলের উপর। ঘন কালো একঢাল চুল যেকোনো সাজেই একটা ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া দেয়। আমরা সবাই জানি চুল দীর্ঘস্থায়ী নয়, বলা ভালো কালো চুল দীর্ঘস্থায়ী নয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পাকা হওয়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। চুল সাদা হওয়ার কারণে চুলে রঙ প্রদানকারী মেলানিন উৎপাদন বয়সের সাথে সাথে কমতে শুরু করে এবং এমন পরিস্থিতিতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল সাদা হয়ে যায়। তবে অকালে চুল পাকা হয়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা থেকে কম নয়। হরমোনজনিত ও পরিবেশগত কারণে অল্প বয়সেই চুল পাকা হওয়ার সমস্যা শুরু হয়।
কিন্তু বর্তমানে কমবয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যেও অকালে চুল পেকে যাওয়ার মতো ঘটনা আখছার দেখা যাচ্ছে। হয়ত তার চুল পাকার বয়স হয়নি তবুও কালো চুলের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সাদা চুল। কিন্তু কেন এমন হয়? এর থেকে বাঁচার উপায়ই বা কি? আসুন আমরা জানি কি এর আসল কারণ।
Table of Contents
কম বয়সে চুল পেকে যাওয়ার কারণ
অকালে চুল পেকে যাওয়া যেমন জিনঘটিত কারণে হতে পারে, আবার লিভারের সমস্যার কারণও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সমসাময়িক জীবনধারার যে কারণগুলির জন্য চুল পেকে যায় অকালে, সেগুলি হল।
- অতিরিক্ত স্ট্রেস: চুল পড়ে যাওয়া এবং চুল পেকে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করে স্ট্রেস। অনেক বেশি মানসিক চাপ ও চিন্তার কারনে চুল তাড়াতাড়ি পেকে যেতে পারে। স্ট্রেসের কারণে মস্তিষ্কে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন হতে শুরু করে। আর এর কারণে চুল সাদা হয়ে যায়। তাই আমাদের যথা সম্ভব স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
- প্রোটিনের ঘাটতি: প্রোটিনের অভাবের কারণে অনেক সময় চুল পেকে যেতে শুরু করে।
- ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি: শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে চুল ধীরে ধীরে সাদা হওয়া শুরু করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিটামিন বি১২-এর অভাবের কারণে চুলে পাক ধরতে শুরু করে।
- অতিরিক্ত ধূমপান: অত্যধিক ধূমপানের কারণে এবং দূষণের কারণেও চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
চুল পেকে যাওয়া থেকে কিভাবে বাঁচবেন
১. কম বয়সে চুল পাকা রোধ করতে প্রথমেই অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়মিত জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে চুল পাকার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
২. স্ট্রেস কমাতে হবে। অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কিছু করা চুলের জন্য ক্ষতির কারণ।
৩. প্রতিদিন শ্যাম্পু করা যাবে না। এর জন্য আপনাকে ভালো হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
৪. নিয়মিত খাবারে সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে হবে।
৫. পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার ডায়েটে রাখতে হবে।
৬. সপ্তাহে অন্তত দুদিন মাথায় নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। এতে চুলের পুষ্টিগত গুন্ বাড়ে।
৭. চুলে যতটা সম্ভব কম পরিমানে কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে। অযথা চুলে রঙ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: খুশকির হাত থেকে রেহাই পেতে এই কাজ গুলো অবশ্যই করুন।
চুল পাক ধরা থেকে বাঁচতে আরও কিছু পন্থা
ধরুন আপনার চুল ইতিমধ্যেই অকালপক্বতার শিকার। এমতবস্থায় বাজারজাত হেয়ার ডাই কিনে লাগালে চুলের অবস্থা আরও খারাপ যে হবে না তা কে বলতে পারে! তাই পাকা চুল ঢাকতে চুলে ব্যবহার করুন এই ঘরোয়া প্যাকগুলি।
১.নারকেল তেল আর পাতিলেবুর রস: উপকরণ দুটি মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি আপনার চুলে আর মাথার তালুতে ভালো করে লাগান। 20 মিনিট রেখে হালকা মোলায়েম শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
২.কারিপাতা: নারকোল তেলে কারিপাতা দিয়ে ফোটান। তেলের রং বাদামি/কালচে হয়ে এলে তা ঠান্ডা করে চুলে লাগিয়ে রাখুন। সপ্তাহে তিনদিন ব্যবহারে দারুন ফল পাবেন।
৩.আমলকী: নারকেল তেলের সঙ্গে আমলাগুঁড়ো মিশিয়ে গরম করতে হবে। তারপর সেটা ছেঁকে চুলের গোড়া থেকে ডগা অবধি লাগিয়ে নিন। রাতভর মাথায় রাখুন। তারপর সকালে ঈষদুষ্ণ জলে চুল ধুয়ে নিন।
৪.হেনা: প্রাকৃতিক ভাবে চুল রাঙাতে এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হেনার জুড়ি নেই। আগেরদিন রাতে হেনা ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন লোহার পাত্রে চায়ের লিকার, লেবুর রস, হেনা মিশিয়ে চুলে লাগান। ঘন্টাখানেক রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৫.কালোকফি: খুব কড়া করে কফি বানিয়ে ঠান্ডা করে নিন, তার পর তা সমস্ত চুলে আর মাথায় ঢেলে দিন। 20 মিনিট অপেক্ষা করলে কফির রং পুরোপুরি চুলে আর মাথায় বসে যাবে। তার পর স্রেফ জল দিয়ে চুল আর মাথা ধুয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহার করতে করতে এটি আপনার চুলে একটা গাঢ় বাদামি রং নিয়ে আসে এবং সব পাকা চুলকে সেই রং দিয়েই ঢেকে দেয়|
৬.পেঁয়াজের রস: একটি পেঁয়াজের রস বার করে তা চুলে মাখুন, বিশেষ করে চুলের গোড়ায়। অপেক্ষা করুন 40 মিনিট, তারপরে ধুয়ে ফেলুন। চুলের জন্য পেঁয়াজের রস দারুণ উপকারী। এটি ক্যাটালেজ নামের এনজাইমে ভরপুর, যা চুলের একেবারে গোড়া থেকে তাকে কাঁচা বা কালো করে দেয়।
৭.আলু: পাকা চুলের মোকাবিলা করার জন্য সবচেয়ে সহজ উপাদান সম্ভবত আলু। এই স্টার্চ দ্রবণটি পাকা চুলে পিগমেন্ট যোগ করে পাকা চুল ঢাকতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে আলু সেদ্ধ করুন, যতক্ষণ না তার মধ্যে থেকে স্টার্চ বেরিয়ে এসে দ্রবণ তৈরি হচ্ছে। এবার দ্রবণটি ছেঁকে নিন| তারপর তরলটি সারা চুলে আর মাথায় ভালোভাবে মাখুন। আধ ঘণ্টা রেখে জল দিয়ে মাথা আর চুল ধুয়ে ফেলুন।
উপরিউক্ত নিয়ম ও টিপসগুলো ব্যবহার করে অবশ্যই উপকার পাবেন আপনি। তবে সমস্যা যদি খুবই খারাপের দিকে এগোতে থাকে তবে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।
আরো পড়ুন: ব্রণর হাত থেকে মুক্তি পেতে এই বিশেষ কাজগুলো করুন।
আরো পড়ুন: ভাবছেন দুধ চা খাবেন নাকি লিকার চা? জেনে নিন এই উপকারিতা-অপকারিতা