ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং জগতে আজ এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু চেনাব ব্রিজ-এর উদ্বোধন করেছেন, যা শুধু একটি অবকাঠামো প্রকল্প নয়, ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার এক জীবন্ত প্রমাণ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,১৭৮ ফুট (৩৫৯ মিটার) উঁচু এই সেতুটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই দশক, ব্যয় হয়েছে ১,৪৮৬ কোটি টাকা। এই ব্রিজটি আইফেল টাওয়ারের থেকেও বেশি উঁচু।
ইতিহাসের পথপরিক্রমা
চেনাব ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে, কিন্তু প্রকল্পটি মুখোমুখি হয়েছিল নানা চ্যালেঞ্জের:
- প্রকৃতির রোষ: চেনাব নদীর গভীর খাদ, খাড়া পাহাড় ও ভূমিধসের প্রবণতা
- প্রযুক্তিগত জটিলতা: ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে এই ধরনের সেতু নির্মাণ
- জলবায়ু সমস্যা: তীব্র শীত ও বরফ পড়া অঞ্চলে নির্মাণ কাজ
জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আজ বলেন, “ব্রিটিশরাও যা করতে পারেনি, ভারতীয় প্রকৌশলীরা তা করে দেখালেন।”
প্রযুক্তিগত বিস্ময়
এই সেতুর কিছু মাত্রাতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য:
- দৈর্ঘ্য: ১,৩১৫ মিটার
- মূল খিলানের দৈর্ঘ্য: ৪৬৭ মিটার
- ওজন: প্রায় ১০,৬০০ টন ইস্পাত ব্যবহৃত
- ভূমিকম্প সহনশীলতা: রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে সক্ষম
- বাতাসের গতি: ২৬৬ কিমি/ঘণ্টা গতির বাতাসেও অটুট থাকবে
অর্থনৈতিক প্রভাব কেমন পড়বে
এই সেতুটি জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনীতিতে বিপ্লব আনবে:
- পর্যটন বৃদ্ধি: প্রতিবছর লক্ষাধিক পর্যটক আসবেন এই বিস্ময় দেখতে
- কৃষি বিপণন: স্থানীয় কৃষকদের পণ্য দ্রুত বাজারে পৌঁছাবে
- রোগী পরিবহন: জরুরি স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সহজ হবে
- সামরিক সুবিধা: সীমান্ত এলাকায় সৈন্য ও সরঞ্জাম পরিবহন সহজতর হবে
নির্মাণের নেপথ্যে
এই মেগা প্রকল্পে কাজ করেছেন:
- ৩,০০০+ প্রকৌশলী ও শ্রমিক
- ৫০+ বিশেষজ্ঞ দল
- ১০০+ টন বিশেষ ইস্পাত ব্যবহার
- ২৪/৭ কাজ চালিয়ে ২০ বছর লাগিয়েছে সম্পূর্ণ করতে
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কি রকম
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে বলেন, “এটি শুধু সেতু নয়, ভারতের একত্ব ও উন্নয়নের প্রতীক।” অন্যদিকে, স্থানীয় নেতারা এই প্রকল্পকে জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: এই সেতুর সাফল্যের পর হিমাচল প্রদেশ ও অরুণাচল প্রদেশে একই ধরনের মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা ভাবছে ভারত সরকার।
