রাখী বন্ধন উৎসব ঘিরে প্রত্যেক ভারতীয়দের মনে একটা আলাদা জায়গা রয়েছে। এই উৎসবটি ভাই ও বোনের ভালবাসার উৎসব এবং এই উৎসবের মাধ্যমে ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। এই দিনে ভাইরা তাদের বোনেদের জন্য শপথ করে যে তাদের সমস্ত রকম বিপদ থেকে রক্ষা করবে। এছাড়াও এই দিনটায় বোন কিংবা দিদিরা, ভাই-দাদাদের কাছ থেকে নিজের মন মতো জিনিস উপহার হিসেবে দাবি করে। ভাই বোনেদের মধ্যে সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করার জন্যই এই উৎসবের মূল উদেশ্য।
Table of Contents
২০২৩ এ রাখী বন্ধনের শুভ তারিখ এবং সময়
৩০ এবং ৩১ শে আগস্ট বুধবার (Wednesday, 30 Aug, 2023), বৃহস্পতিবার (Thursday, 3১ Aug, 2023) অনুষ্ঠিত হবে।
এই বছর রক্ষা বন্ধন ৩০ আগস্ট পড়বে। দৃক পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, পূর্ণিমা তিথি ৩০শে আগস্ট সকাল ১০:৫৮ টায় শুরু হবে এবং ৩১শে আগস্ট সকাল ০৭:০৫ টায় শেষ হবে। ভাদ্র মাস শেষ হওয়ার পরে ভাইবোনরা রাখি বাঁধতে পারেন, যেহেতু এটি পূর্ণিমার সাথে মিলে যায় এবং পূর্ণিমা তিথির প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রসারিত হয়। রাখি বাঁধার সেরা সময় শুরু হয় ৩০শে আগস্ট রাত ৯:০১ টায়।
রাখী বন্ধন কবে থেকে এই প্রথা শুরু হয়
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর প্রথম এই উৎসবের সূচনা করা হয়। নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গের সময় (১৫০৫) একটি গণরক্ষা বন্ধন উৎসব শুরু করেছিলেন। যা পরে রাখী উৎসব নামে পরিচিত পায়।
রাখী বন্ধন শুরু হওয়ার কারণ কি
সেই প্রাচীন কাল থেকে এই উৎসবটি পালন করা হলেও এটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে অজানা ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মুছে দেওয়ার জন্য, বাঙালির ঐক্য বজায় রাখার জন্য এই উৎসবটি আবার শুরু করেন।
তিনি বলেছেন হিন্দু, মুসলিম, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই সবার ভাই, সবার ধর্ম একটাই সেটা হলো মনুষ্যত্ব। তিনি হিন্দু ও মুসলিম মহিলাদের উৎসাহিত করেছিলেন যে তারা অন্য সম্প্রদায়ের পুরুষদের উপর রাখী বাঁধবে এবং তাদের ভাই বানাবে।
আরো পড়ুন: Ganesh Chaturthi 2023: জানুন গনেশ চতুর্থী তিথি, পূজোর বিধি, নিয়ম, মন্ত্র, উপকরণ এবং ইহার তাৎপর্য
রাখী বন্ধন উৎসব কি
শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বোন কিংবা দিদিরা তাদের ভাইদের হাতে সুতো দিয়ে তৈরি সুন্দর ভাবে সাজানো একটি জিনিস অর্থাৎ “রাখি” বাঁধে যেটি আমাদের কাছে ভীষণ পবিত্র।
এটা ভাই কিংবা দাদার মঙ্গল কামনা করে এবং আজীবন স্নেহ ভালবাসার বন্ধনে পরস্পরের সঙ্গে পরস্পরকে বেঁধে রাখে। এটি ভারতীয়দের কাছে একটি বিশেষ উৎসব।
আগেকার সময় হিন্দু, জৈন ও শিখরা এই উৎসব পালন করত কিন্তু বর্তমানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই রাখী উৎসবটি পালন করে। এই রাখি হলো ভাইদের বোনকে রক্ষা করার শপথের প্রতীক।
আরো পড়ুন: কিডনিতে পাথর কেন হয় ? কিডনি পরিশ্রুত করার ১০ টি ঘরোয়া উপায়
রাখী বন্ধন উৎসব শুরুর পৌরাণিক কাহিনী
মহাভারতে কথিত আছে কৃষ্ণের হাতে দ্রৌপদী রেশমের কাপড় ছিঁড়ে রাখী বেঁধেছিলেন এবং কৃষ্ণ তাকে শপথ করেছিলেন যে সমস্ত বিপদ থেকে সে দ্রৌপদীকে রক্ষা করবে। পাশা খেলায় দুষ্ট শকুনের কাছে পরাজিত হবার পর রাজসভায় চরম অপমান এবং কলঙ্কের হাত থেকে তিনি দ্রৌপদীকে রক্ষা করেছিলেন।
সিদ্ধিদাতা গণেশের মেয়ে সন্তোষী মা তার দুই ভাই শুভ লাভের হাতে রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন এবং তারা বোনকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন।
বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষী বলিরাজের হাতে শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার তিথিতে রাখি পড়িয়ে ছিলেন এবং নিজের স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। বলিরাজ সমস্ত কিছু বিষ্ণু এবং লক্ষ্মীর জন্য ত্যাগ করেছিলেন।
আরো পড়ুন: জাঙ্ক ফুড শরীরে কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে – জানুন ৯টি সমস্যা
রইলো রাখী বন্ধনে কিছু শুভেচ্ছা বার্তা (Whatsapp Messages)
১)
বাবার পরে আমার জীবনে সবচেয়ে হ্যান্ডসাম এবং স্মার্ট পুরুষ তুই। যে আমাকে খুব ভালোবাসে আবার বকেও। তুই সারা জীবন এরকম দুষ্টু মিষ্টি আমার কিউট দাদা হয়ে থাকিস। শুভ রাখী পূর্ণিমা!
ভাই, এই রাখী পূর্ণিমার দিনটা তোর কথা খুব মনে পড়ে। দুজনে একসঙ্গে না থাকলেও আমার ভালোবাসা আশীর্বাদ সবসময় তোর সঙ্গে থাকবে। হ্যাপি রাখী পূর্ণিমা ভাই!
৩)
বিপদে বন্ধু হিসেবে তোকে সব সময় পাশে পেয়েছি, হাত খরচা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু তোর কাছে আবদার করতে পেরেছি। আমি তোকে অনেকটা ভালবাসি দাদা। তোর সুস্থ থাকা, ভালো থাকা কামনা করে জানাই হ্যাপি রাখী দাদা।
৪)
ছোটবেলার সুপারম্যান আর বড় বেলার হিরো সবই তুই ভাই। বাড়িতে কত বোকা থেকে তুই আমাকে সব সময় বাঁচিয়ে দিয়েছিস। শুভ রাখী পূর্ণিমা জানাই তোকে।
৫)
স্কুলে কিংবা টিউশন ব্যাচে গার্জিয়ান কল হলে সেখানে বাবার জায়গায় উপস্থিত হয়ে যেতিস, এই সব পাগলামি গুলো খুব মনে পড়ে দাদা। শুভ রাখি পূর্ণিমার অনেক ভালোবাসা এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা নিস।
৬)
ঝগড়া আর খুনসুটিতে ভরা ছোটবেলার মাঝখানে বুঝতেই পারলাম না কিভাবে এতগুলো বছর একসাথে কেটে গেল। তুই সব সময় আমায় বিরক্ত করতিস আর আমি তোর বিরক্ত সহ্য করতাম। আর নালিশ করলে তুই আমাকে ভীষণ কাতুকুতু দিতিস। এত বদমাশ ছিলিস। আজও কিছুটা ওইরকমই আছিস। সব সময় এরকম থাকিস।
শুভ রাখী পূর্ণিমা ভাই !
৭)
“ ফুলো কা তারো কা সবকা কেহেনা হে 1 এক হাজারো মে মেরি বেহেনা হে/ সারি উমার হামে সঙ্গ রেহেনা হে ” শুভ রাখী পূর্ণিমা বোন!
৮)
দিদি তুমি আমার কাছে মায়ের চেয়ে কোনো অংশেই কম নও, মা না থাকলে যখন কেঁদেছি তুমি আমাকে বুকে টেনে নিয়েছো। তাই তোমাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অনেক অনেক ভালোবাসা।
৯)
দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেছে পাকা বুড়িটা আমার। কত খেয়াল রাখে, ভালবাসে আমাকে। তোর দাদার তরফ থেকে অনেক আদর ভালোবাসা তোর জন্য। শুভ রাখী পূর্ণিমা জানাই তোকে।
১০)
“মেরা ভাই তু…মেরি জান হে।” হ্যাপি রাখি ভাই। এই ভাবেই সব সময় সুখে দুঃখে আমার পাশে থাকিস। শুভ রাখী পূর্ণিমা !