এই বছর আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ তম দিবস। ২০০ বছর ধরে ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে থেকে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। এই স্বাধীনতা কিন্তু একেবারে আসেনি এসেছে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে, অনেক রক্ত ঝরিয়ে। আজ আমাদের ভারতমাতা স্বাধীন। সে এক বিশাল ইতিহাস কথা। আজ আমরা নিজেদের মত থাকি, নিজেদের কথা মুখ ফুটে বলতে পারি তার পিছনে আছে বহু মানুষের রক্ত, আছে বহু মানুষের বলিদান ও আন্তত্যাগ।
Table of Contents
পতাকার তিন রঙের তিন বৈশিষ্ট
পতাকার তিনটি রং হল জাফরান, সাদা এবং সবুজ।
জাফরান: পতাকার জাফরান রঙ সাহস ও ত্যাগের প্রতীক।
সাদা: সাদা রঙ সততা, শান্তি এবং বিশুদ্ধতার প্রতিনিধিত্ব করে।
সবুজ: সবুজ রঙ বিশ্বাস এবং বীরত্বের প্রতিনিধিত্ব করে।
অশোক চক্র: পতাকার মাঝের বৃত্তটিকে বলা হয় অশোক চক্র এবং এটি নীল রঙের। এটির রঙ সম্পর্কে বলা হয়, নীল রঙ আকাশ, মহাসাগর এবং সার্বজনীন সত্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। তাই জাতীয় পতাকার সাদা ডোরার কেন্দ্রে রয়েছে নীল রঙের অশোক চক্র।
আরো পড়ুন: 2021 টাকা জমানোর সবচেয়ে ভালো উপায়
স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস
চলুন এইবার জেনেনি সেই সব দিনের কথা যখন আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের জীবনের বিনিময় আমাদের এনে দিয়েছেন আজকের স্বাধীনতা।
পলাশীর যুদ্ধ
প্রায় সতেরোর দশক থেকে ইংরেজরা আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। এরপরে অভ্যন্তরীণ রাজ রাজাদের দ্বন্দ্বের কারণে ইংরেজ রা ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে নামেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে বাংলার রাজা সিরাজউদ্দৌলার যুদ্ধ হয় এবং এই যুদ্ধে সিরাজ পরাজিত হয়। আর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সুপ্রতিষ্ঠা ঘটে।
সিপাহী বিদ্রোহ
শাসনের শুরু থেকেই ইংরেজরা ভারতীয়দের ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। কোনো রাজ্যের উত্তরাধিকার না থাকলে সেই রাজ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যেত। সৈনিক দের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে এলো নতুন কার্তুজ। সেই কার্তুজে ছিল গরু ও শূকরের মাংস যা দাঁতে কেটে বন্দুকে ভরতে হতো। এই বিষয়টি সর্ব প্রথম জনসমক্ষে আনেন মঙ্গল পান্ডে। আর সেই সময় শুরু হয় ১৮৫৭ সালের সেই ভয়াবহ যুদ্ধ সিপাহী বিদ্রোহ। ব্রিটিশরা কঠোর হতে সেই বিদ্রোহ দমন করে।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন
এরপরে ১৮৮৫ সালে জন্ম নেয় জাতীয় কংগ্রেস দল। আর তখনই স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। বহু মানুষ সেই দলে যোগদান করে। ব্রিটিশরা আতঙ্কিত হয়। লর্ড কার্জন সিদ্ধান্ত নেন বাংলা ভাগের। শুরু হয় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন।
সত্যাগ্রহ আন্দোলনের
এরপর ইংরেজরা রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে। এই সময় বহু বিপ্লবী এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে যেমন ক্ষুদিরাম বসু, বিনয় বাদল দীনেশ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। ১৯১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরে মহাত্মা গান্ধী নিজেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে নিয়োজিত করে। এরপর দেশে রাউলাট আইন চালু হলে গান্ধীজি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেন।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড
এরপর জালিয়ানওয়ালাবাগে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। দলে দলে নিরীহ মানুষকে একটা উঁচু পাঁচিল দেওয়া জায়গায় আটকে রেখে তাদের উপর অকথ্য নির্মম ভাবে গুলি চালায়। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু পরে তিনি তা প্রত্যাহার করেন।
আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ইংরেজরা সেই স্বাধীনতা স্বীকার করে না। তারপরেই শুরু হয় আইন অমান্য আন্দোলন। এই আন্দোলনে সারা দেশের লোক দলে দলে যোগদান করে। এরপরে আগমন হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর। তিনি বুঝেছিলেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন যুদ্ধের। তিনি বলেছিলেন “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো”। আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন।
আরো পড়ুন: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ১৩ টি সহজ উপায়
স্বাধীনতা ও দেশ ভাগ
ইংরেজ রাজ বেশ বুঝেছিলেন তাদের সময় ঘনিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় ১৯৪৬ সালে মহম্মদ আলী জিন্না দাবি রাখেন একটি আলাদা রাষ্ট্রের অর্থাৎ একটি মুসলিম রাষ্ট্রের। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের নেতা রা এই দাবিতে সম্মতি জানান নি। কিন্তু ইংরেজ রা এই দাবি কেই কাজে লাগিয়ে মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করে। বহু মানুষ এই সময় মারা যান। অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তান নামে নতুন রাষ্ট্র গঠন হয়। আর সেই ১৪ই আগস্ট রাত ১২টা বাজার কিছু আগে জওহরলাল নেহেরু ভাষণ দিতে শুরু করেন তিনি বলেন
“At the stroke of the midnight hour, when the world sleeps, India will awake to life and freedom.” আর ঠিক রাত ১২ টায় ভারতবর্ষ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত হয়। কিন্তু একদিকে ভারতের স্বাধীনতা অন্যদিকে দেশভাগের সাম্প্রদায়িকতার আগুন মানুষের মন কে শান্তি দেয়নি। এই দেশভাগের আগুনে প্রাণ দিয়েছে শ শ মানুষ। বহু মানুষ মারা গেছেন না খেতে পেয়ে। তবুও সেই সাময়িক অরাজকতার পরে আজ আমরা স্বাধীন। নিজেদের দাবি নিজেরা রাখতে পারি। সব জায়গায় আজ আমাদের অবাধ বিচরণ।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ভারতের উন্নতি
ভারতবর্ষ আজ যে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তার কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজ দের ভূমিকা বেশ চোখে পড়ার মতোই। ইংরেজরা এই ভারতবর্ষে নিজেদের সুবিধার্থে কিছু জিনিসের প্রচলন করে যা ভারতবর্ষকে আজকের পর্যায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
ইংরেজরা নিজেদের সুবিধার্থে ভারতবর্ষে ট্রেন চলাচল চালু করেছিল। যা ভারতবর্ষের পরিবহন ব্যবস্থা কে অনেক খানি সচল করে। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজদের সাহায্য নিয়ে নারী দের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। যার কারণে আজকের মেয়েরা শিক্ষিতা।
আজকের স্বাধীনতা দিবস
আজ আমরা স্বাধীন। প্রত্যেক বছর ১৫ই আগস্ট আমাদের গোটা ভারতবর্ষে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়। ভারতের প্রধান মন্ত্রী মাননীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে দিল্লির লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
সারাদিন গোটা ভারতে পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন ক্লাবে ক্লাবে নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
সারা বেলা এই অনুষ্ঠান চললেও সন্ধে বেলা পতাকা নামিয়ে নেওয়া হয়। আমাদের জাতীয় পতাকা আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের জাতীয় পতাকার প্রত্যেকটি রং একটি করে আলাদা গুরুত্ব বহন করে। জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।