মানসিক স্বাস্থ্যকে দৃঢ় করার ৮ টি সুপারফুড [Super-food]

Share It!

মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য।আমরা অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতটা গুরত্ব দেখাই না। তাই আমাদেরকে পরবর্তী জীবনে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। 

সুতরাং আমাদের মস্তিষ্কের উন্নতি এবং আমাদের শারীরিক বিকাশের জন্য আমরা যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খাই সেটি আমাদের পক্ষে খুবই ভালো। যে সমস্ত খাবার আমাদের মস্তিষ্ক বিকাশের বাধা সৃষ্টি  করে সেই সমস্ত খাবার বর্জন করা একান্তই দরকার।

এখানে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি করার জন্য ৮টি সুপারফুডস এর নাম দেওয়া হলো, যদি খাদ্যগুলি আমরা আমাদের রেগুলার ডায়েট এর মধ্যে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে এবং আমরা ডিপ্রেশন এর মত মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। এই খাদ্য খাওয়ার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু পরিশ্রম করতে হবে না কারণ আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সকলেই এই খাদ্য খেয়ে থাকি।

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য ৮ টি সুপার ফুড

    Fatty Fish

    আমাদের বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের একটি প্রধান খাদ্য রয়েছে মাছ। মাছ ছাড়া আমাদের বাঙ্গালীদের খাবার সম্পন্ন হয় না। আমরা জানি মাছের নানান গুণ রয়েছে। কিন্তু মস্তিষ্কের বিকাশে মাছের কতটা গুণ রয়েছে তা নিয়ে আমরা অনেকেই অবগত নই।

    প্রধানত মাছের মধ্যে থাকা ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড আমাদের মস্তিষ্কের উন্নয়নের প্রধান অত্যাবশ্যক জিনিস। মাছের তেলে প্রধানত দুই ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকে। 

    ১. DHA

    US ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথের মতে, মস্তিষ্ক প্রায় 60% ফ্যাটযুক্ত এবং এর বেশিরভাগই ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড ডিএইচএ।

    ২. EPA

    এই দুই ধরনের ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের কোষ ও কোষ পর্দার উপর এর প্রভাব ফেলে সেগুলিকে আরো সুখ পরিপূরক গড়ে তোলে এবং এক কোষ থেকে অন্য কষে যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। 

    Read More:  অকালে চুল পেকে যাচ্ছে? চুলের অকালপক্বতা থেকে বাঁচতে এই গুলো মেনে চলুন

    শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য Fatty Fish অত্যাবশ্যক এবং গর্ভবতী মহিলাদের ফ্যাটি এসিড বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় সুতরাং গর্ভবতী মহিলারা যদি বেশি পরিমাণে এই মাছ খায় তবে তাদের পক্ষে খুবই উপকারী।

    ফ্যাটি এসিডের উৎস অনেক কিছুর মধ্যেই আমরা খুঁজে পাই কিন্তু আমাদের বাঙালিদের কাছে ফ্যাটি এসিডের  উৎস হিসেবে মাছ হচ্ছে সবচেয়ে আদর্শ। তাই রোজ Lunch এ আমাদের মাছ রাখা অতন্ত্য জরুরী। 

    আরও পড়ুন: Meditation এর উপকারিতা, কৌশল, সময়

    Dark Chocolate

    সবাই চকলেট খেতে খুব পছন্দ করি চকলেট খাবার আগ্রহ ছোট থেকে বড় সবারই থাকে। Dark chocolate খুবই সহজে পাওয়া যায়। Dark chocolate এর মধ্যে এক ধরনের কেমিক্যাল থাকে, যার নাম – এন্ডোরফিনস। এই কেমিক্যাল আমাদের মস্তিষ্কের ভালো লাগার প্রবণতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই এন্ডোরফিনস এর পরিমাণ Dark chocolate বাড়িয়ে দেয়। শুধুমাত্র তাই নয় Dark chocolate ড্রাপামিন এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে যা আমাদের মস্তিষ্কে ইতিবাচক মনোভাব আনতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

     Dementia প্রভাব 

    ডিমেনশিয়া (dementia) হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের প্রদাহ যে প্রদাহ আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃস্টি করে। ডিমেনশিয়ার ফলে আমাদের মস্তিস্কের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় এবং ভাষা মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস পায় মস্তিষ্কে এর পরিমান বেড়ে গেলে। এই চকলেট এই ডিমেনশিয়া কে কমিয়ে দেয়। এই জন্য মাঝে মাঝে Dark Chocolate খাওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়। 

    সুতরাং আমরা যদি Dark chocolate নিয়মিতভাবে খেতে পারি তাহলে আমরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারবো এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবো।

    হলুদ (Turmeric) 

    আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হলুদ একটি প্রয়োজনীয় সঙ্গী। বিভিন্ন কাজে হলুদ ব্যবহার করে থাকি। আমরা অনেকেই জানি না আমাদের মস্তিষ্কে সুস্থতার একটি প্রধান উপাদান হলুদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিজেন যেমন কারকিউমিন ক্রনিক ইনফ্লাম্মেশন কমাতে সাহায্য করে।

    ক্রনিক ইনফ্লামেশন হল এমন এক ধরনের ইনফরমেশন বা প্রদাহ যা আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে হয়ে থাকে যার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির হয়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা  গেছে এই ক্রনিক ইনফর্মেশন আমাদের মস্তিষ্কের একটি চিরস্থায়ী প্রদাহ রূপে কাজ করে যার সাথে সোজাসুজি ভাবে depression এর যোগাযোগ রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই অস্বাস্থ্যকর একটি মানসিক রোগ।

    Read More:  খাওয়ার ইচ্ছা কি কমে গেছে ? তাহলে শরীরে কি এই পুষ্টির অভাব আছে

    Depression এখনকার যুবসমাজের চলিত কথা যা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। ডিপ্রেশনের কারণে আমাদের শুধুমাত্র মানসিক স্বাস্থ্য নয়, আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও খুব প্রভাব বিস্তার করে।  সুতরাং হলুদ সোজাসুজিভাবে আমাদের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে এবং যার ফলে আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে খুব সাহায্য হয়। 

    আরও পড়ুন: যোগের[YOGA] ২০টি উপকারিতা  

    পালং শাক (Spinach)

    আমরা প্রত্যেকেই দৈনন্দিন জীবনে সুস্বাস্থ্যের জন্য যে সমস্ত খাবার খেয়ে থাকি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পালংশাক। আমরা সকলেই জানি পালং শাক এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন মিনারেল রয়েছে সুতরাং একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা পালংশাকের মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্ক এবং মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য অতন্ত্য প্রয়োজনীয়।

    Spinach নিউরন এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন বিসক্ত পদার্থ বর্জন করতে সাহায্য করে আর ফলে নিউরন আরো প্রভাবশালী হয়।

    Fermented Food

    Fermented Food হচ্ছে আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের খাদ্য পদ্ধতি। এই ধরনের খাবার আমরা সকলেই মাঝেমধ্যে গ্রহন করি। খাদ্য সংরক্ষণের ফলে ব্যাকটেরিয়া গুলি আমাদের মিক্রবিওটার মধে বিস্তার করে। 

    মাইক্রোবায়ম হলো আমাদের শরীরে বসবাসকারী অন্যতম অণুজীব সম্প্রদায়। এই অণুজীব সম্প্রদায় ডিপ্রেশন কমাতে প্রধানভূমিকা পালনকরে।

    কলা (Bananas)

    দৈনন্দিক জীবনে খাদ্যের মধ্যে অন্যতম হলো Banana. কলার মধ্যে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা  দেহের Immunity শক্তিকে বাড়া দেয়। 

    আমাদের শরীরে অনেক রকমের নিউরোট্রান্সমিটার রয়েছে। এই নিউরোট্রান্সমিটার গুলি মস্তিষ্কের নিউরন থেকে অন্য নিয়ন্ত্রণে বার্তা প্রেরণ করে। এই ধরনের একরকম ট্রান্সমিটার হলো সেরোটোনিন। কলা খাবার ফলে এই নিউরো ট্রান্সমিটার এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

    Oats

    আমরা শরীরের ওজন কমাতে সকালে ওটস খেয়ে থাকি।  কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে তার  চেয়েও অনেক উপকারী জিনিস রয়েছে। সেই উপকারিতা হলো – এতে অনেক প্রোবায়োটিক থাকে এই প্রোবায়োটিক রক্তে গেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

    শিম এবং মসুর ডাল (Beans and Lentils)

    Beans হচ্ছে একটি পুষ্টিকর খাবার। বিনস খেলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম হয়।মহিলারা এই খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে যা আমাদের নীতি বাচক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

    Read More:  গলা ব্যথা কমানোর সহজ উপায়: Throat Pain Relief in Bengali

    আপনার পক্ষে খুবই উপকারী হবে যদি আপনি আপনার রোজ খাবারের ডায়েট এ lentils রাখেন।  এই খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের Urine এর পরিমাণ নরমাল থাকে এবং আপনার মধ্যে পজিটিভ এনার্জি ফ্লো করে।

    আরও পড়ুন:  ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রান্তের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, সাবধানতা

    কি ধরণের খাদ্য আমরা এড়িয়ে চলবো

    এমন কিছু খাদ্য রয়েছে যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে খেয়ে থাকি, যে গুলি খাওয়ার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় না উপরন্তু ক্ষতি হয়। এই ধরনের খাদ্য যদি যথাসম্ভব বর্জন করতে পারি তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই সুবিধাজনক। 

    • Junk Food যথা সম্ভব খাওয়া বন্ধ করতে হবে। 
    • Mayonnaise বা এই জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
    • তেলেভাজা খাওয়া একদম কমিয়ে ফেলতে হবে।  এটি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।  
    • Soft Drinks খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে , কারণ এতে প্রচুর পরিমান chemical মেশানো হয় যা শরীরের পক্ষে অতন্ত্য ক্ষতিকারক। 
    • মদ্য পান বা Cigarette পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। এগুলো মস্তিস্ক্য তথা স্বাস্থ্যের  পক্ষে প্রচণ্ড ক্ষতিকারক।
    • অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিত বা অতিরিক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার সেটিও আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা উৎপন্ন করে এবং আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকৃতি ঘটায়।

    আরও পড়ুন:  মেয়েদের ওজন কমানোর সেরা ডায়েট চার্ট

    2 thoughts on “মানসিক স্বাস্থ্যকে দৃঢ় করার ৮ টি সুপারফুড [Super-food]”

    Leave a Comment