পেটের মেদ কমানোর সেরা ১৫ টি উপায়

Share It!

এই লকডাউনের সময় বর্তমানে নারী পুরুষের জীবনে একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুঁড়ি অর্থাৎ পেটের অতিরিক্ত মেদ। এই মেদ আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই কম বেশি আছে। কিন্তু এই লকডাউনে বাড়িতে বসে বসে খেয়ে আর ঘুমিয়ে আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই অতিরিক্ত মেদ জমছে। আর এই মেদের সব থেকে বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে, সে পেটে জমতেই বেশি পছন্দ করে।


  

    পেটে মেদ জমার কারণ কি ?

    পেটে মেদ জমার মূল কারণ হলো আমাদের খাদ্যাভ্যাস।এছাড়া আরো একটি কারণ হলো জাঙ্ক ফুড। আমরা যে সব খাদ্য গ্রহণ করি তার বেশিরভাগটাই জাঙ্ক ফুডের আওতায় ফেলা যায় যেমন পিৎজা, বার্গার, কেক ইত্যাদি। এছাড়া অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাদ্য খেলেও শরীরে মেদ জমে। কোল্ড ড্রিঙ্কসও শরীরে মেদ জমাতে অপরিহার্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকলে, ঠিক মতো ঘুম না হলে, রাতে অনেক দেরি করে খাওয়ার ফলেও পেটে মেদ জমে।  

    পেটের মেদ ঝড়ানোর উপায়

    পেটের মেদ ঠিক যত আসতে আসতে বাড়ে ঠিক ততই কমতেও সময় লাগে। আগে বলা হত ভুঁড়ি সুখী মানুষের লক্ষণ কিন্তু বর্তমানে এই ধারণা উল্টে গেছে। এখন ভুঁড়ি হলে দেখতেও ভালো লাগে না আর বর্তমান দিনে এই পেটের মেদ প্রত্যেকের কাছেই একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যাভ্যাস আর কিছু ব্যায়াম এর মাধ্যমেই এই মেদ কমানো যায়। এই মেদ কমানোর কিছু সহজ ও উপকারী টিপসই আজকে আমরা আপনাদের জানাতে চলেছি। 

    নিয়মিত কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে পেটের মেদ কমানো যায়।

    ১. সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস গরম জলে এক কোয়া লেবুর রস মিশিয়ে তা পান করতে হবে। লেবুর আন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্যাট কে গলাতে সাহায্য করে। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এটি খাওয়ার উপযুক্ত সময়। 

    Read More:  Weight Loss: 40 বছরের পরেও কীভাবে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন

    ২. সকালের ব্রেকফাস্টে রুটি আর সিজিনাল সবজির তরকারি খেতে পারেন। রুটি তে থাকে কার্বোহাইড্রেট। এই কার্বোহাইড্রেট শরীরে প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরের ক্ষতি করে।

    ৩. মিড ব্রেকফাস্টে সিজিনাল ফল খেতে পারেন। তবে টক জাতীয় ফল শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। 

    ৪. বিভিন্ন রিসার্চে জানা গেছে শরীরের মেদ ৯০ শতাংশ খাদ্যাভ্যাস আর মাত্র ১০ শতাংশ এক্সরাসাইজের ওপর নির্ভর করে। তাই খাদ্যাভ্যাস ঠিক মত করাটাই সবার আগে জরুরি। 

    ৫. কখনো খালি পেটে থাকা যাবে না। এর মূলত কারণ হলো অনেক্ষন খালি পেটে থাকলে আমরা ক্ষুধার্থ হয়ে পড়ি ফলে ঝোঁকের বশে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। এতে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হয় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। 

    আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক এড়ানোর ১০টি সহজ উপায়। হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ

    ৬. আরো কিছু অভ্যেস বদলাতে হবে যা খুবই সাধারণ সেটি হলো Slow Eating। রিসার্চ করে জানা যায় আমাদের যে পেট ভরে গেছে এটি মস্তিষ্কে সিগন্যাল পৌঁছাতে সময় নেয় – খাওয়া শুরু করে শেষ করার প্রায় ২০ মিনিট পরে। তাই তাড়াতাড়ি খেলে আমরা ৫ মিনিটেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। 

    ৭. এছাড়াও তাড়াতাড়ি খাবার কারণে আমরা ঠিক মতো চিবিয়ে খাই না। আমরা মনে করি খাবার ডাইজেস্ট হয় শুধু মাত্র পেটে। কিন্তু খাবারের গন্ধ নাকে এলে আমাদের মুখ থেকে এক ধরণের লালারস ক্ষরিত হয় যা ডাইজেস্ট হতে সাহায্য করে। 

    ৮. খুব তাড়াতাড়ি খেলে আমাদের মুখে খাবারটা বেশিক্ষন থাকে না তাই খাবারের যতখানি মুখে ডাইজেস্ট হওয়ার কথা তা পুরোপুরি ডাইজেস্ট না হয়েই পেটে যায় এবং সেখানে অর্ধেক অবস্থাতেই ডাইজেস্ট হয়েই দেহে শোষিত হয়। এতেও শরীরে ফ্যাট জমে যায়। 

    ৯. The Journal of the association of Consumer Research এর একটি জার্নাল পড়ে জানা যায় খাবার প্লেটের ডায়ামিটার ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনলে খাবার পরিমানও ৩০ শতাংশ কমে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে  শর্ত আছে সেটা হলো নিজের খাবার  নিজে পরিবেশন করা।

    Read More:  মেয়েদের ওজন কমানোর সেরা ডায়েট চার্ট [Diet chart] 2023

    আরও পড়ুন: মানসিক স্বাস্থ্যকে দৃঢ় করার ৮ টি সুপারফুড

    ১০. আমাদের আরো একটি বদ অভ্যাস হলো খেতে খেতে জল খাওয়া। এটি ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ। খেতে খেতে জল খেলে আমাদের স্টমাক (stomach) থেকে যে ডাইজেস্টিভ হরমোন নির্গত হয় সেগুলো জলের সাথে মিশে ঘনত্ব কমিয়ে ফেলে ফলে খাবার পুরোপুরি ডাইজেস্ট না হয়েই শরীরে শোষিত হয়। তাই খেতে খেতে জল খাবার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। 

    খাবার অন্তত ৩০ মিনিট আগে ও খাবার ১ ঘন্টা পরে জল খাওয়া ভালো। জলের ক্ষেত্রে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া দরকার। সারাদিনে কমপক্ষে ২ লিটার জল খাওয়া জরুরি। জল শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। ফলে ফ্যাট ঝড়তে সুবিধা হয়।  

    ১১. ফ্যাট কমাতে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস আপনাদের দিচ্ছি। খেয়াল রাখবেন কখনো যেনো পেট খালি না থাকে। অর্থাৎ আপনি যেনো ক্ষুধার্থ না থাকেন। এই কথা শুনে আপনি ভাবতে পারেন বেশি খেলে তো ফ্যাট জমবে । কিন্তু তা নয়। অল্প খাবেন কিন্তু বারে বারে খাবেন। বারে বারে খেলে আপনি কখনো ক্ষুধার্থ হবেন না। 

    মাথায় রাখবেন ক্ষুধার্থ হলেই আপনি ঝোঁকের বশে বেশি খাবেন আর শরীরে বেশি ক্যালোরি প্রবেশ করবে। আর হ্যাঁ এই বারে বারে খাবার জন্য আপনি অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন যেমন ডিমের সাদা অংশ, দুধ ইত্যাদি। আর শর্করা জাতীয় খাদ্য আর লবন জাতীয় খাদ্য কে বাদ দেবেন। মাথায় রাখতে হবে চিনি এবং নুন দুটোই শরীরে ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে। 

    আরও পড়ুন: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ১৩ টি সহজ উপায়

    নিয়মিত ব্যায়াম মেদ ঝড়ানোর সেরা উপায়  

    ওই ফ্যাট ঝড়াতে যে ১০ শতাংশ এক্সরাসাইজের প্রয়োজন পরে সেগুলো ফ্যাট কমাতে সব চেয়ে এফেক্টিভ এক্সরাসাইজ হলো যেকোনো কার্ডিও এক্সরাসাইজ করা। কার্ডিও এক্সরাসাইজ হলো সেগুলো যেগুলো আমাদের হার্ট রেটকে বাড়িয়ে তোলে।  

    Read More:  ওজন কমানোর ৫ টি সেরা Health Drinks

    ১. এই যেমন দৌড়ানো, স্কিপিং অথবা সুইমিং করা।

    ২. আপনি চাইলে বাড়িতে বসে বিশেষ ধরণের যোগাও (Yoga) অভ্যাস করতে পারেন। এতে আপনার শরীর ভালো থাকবে, আবার সাথে সাথে আপনার শরীরের মেদও কমতে শুরু করবে।  

    ৩. এছাড়াও আপনি সকালে উঠে ফাঁকা জায়গায় walking বা হাটতে পারেন। যদি এটা কোনো শান্ত পরিবেশে ঘাসের উপর খালি পায়ে করা যায় তাহলে এর ফল আরো ভালো হবে।

    ৪. যদি সম্ভব হয় আপনি হালকা GYM ও করতে পারেন।  এতে পেটের তথা শরীরের মেদ ঝরে এবং শরীরের গঠন ভালো হয়।   

    এগুলো অবশ্যই খালি পেটে এবং সকালে করা জরুরি। সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ধরণের এক্সরাসাইজ গুলো করলে হটাৎই শরীরের অনেক বেশি এনার্জি প্রয়োজন হয়ে পরে। তাই পেট খালি থাকার কারণে এনার্জির জন্য আগে থেকে জমে থাকা ফ্যাট থেকে শরীর এনার্জি সংগ্রহ করে। ফলে শরীর থেকে ফ্যাট direct বার্ন (Burn) হয়। এর ফলে শরীরের মেদ ঝড়ে যায়। 

    আরও পড়ুন: Meditation এর উপকারিতা, কৌশল, সময়

    আরও পড়ুন: ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার

    Leave a Comment