হলুদ বা Turmeric তার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহনাশক) ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদ এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সমাদৃত। এর সক্রিয় উপাদান কুরকুমিন বহু রোগের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয় – যেমন জয়েন্টের ব্যথা, হজমের সমস্যা, এমনকি ইমিউন সিস্টেমের উন্নতিতেও।
তবে সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, হলুদের সাপ্লিমেন্ট বেশি খাওয়ার ফলে লিভার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে – বিশেষ করে যখন তা উচ্চ ডোজে গ্রহণ করা হয়, অথবা শোষণ বৃদ্ধিকারী উপাদানের (যেমন পিপারিন বা কালো মরিচের নির্যাস) সঙ্গে মেশানো হয়।
হলুদের গুণ যেমন আছে, তেমনি আছে বিপদও – বেশি খেলেই হতে পারে মারাত্মক লিভার ক্ষতি
হলুদ সাপ্লিমেন্ট খেয়ে লিভার রোগে আক্রান্ত হয়েছে
৫৪ বছর বয়সী রবার্ট গ্রাফটন বিভিন্ন প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছিলেন, যার মধ্যে ছিল হলুদভিত্তিক একটি তরল সাপ্লিমেন্ট। তিনি এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিজ্ঞাপনে দেখে কিনেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল এটি লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি লক্ষ্য করলেন:
- প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ বা বাদামী
- বমি বমি ভাব
- খাওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়া
- শরীরে চুলকানি
পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি ড্রাগ-ইন্ডিউসড লিভার ইনজুরি (DILI)-তে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি যে হলুদের ক্যাপসুল নিচ্ছিলেন, তাতে ২,২৫০ মিলিগ্রাম কুরকুমিন ছিল — যা একটি অত্যধিক মাত্রা।
রবার্ট বলেন,
“আমার লিভার এনজাইম ছিল অনেক বেশি, বিলিরুবিনও (লিভার ফেইলিওরের চিহ্ন) অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো লিভার ক্যানসার বা প্যানক্রিয়াসের সমস্যা। পরে জানলাম, এটি আমার সাপ্লিমেন্ট থেকেই হয়েছে।”
বিজ্ঞান এই ব্যাপারে কী বলছে?
Drug-Induced Liver Injury Network (DILIN) জানিয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হলুদ সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পর কমপক্ষে ১০টি গুরুতর লিভার ক্ষতির ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ঘটেছে ২০১৭ সালের পর থেকে।
সাধারণ উপসর্গ ছিল:
- অস্থির ক্লান্তি
- বমি বমি ভাব
- গাঢ় প্রস্রাব
- জন্ডিস
গুরুতর ক্ষেত্রে কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতেও হয়েছে এবং একজন রোগী লিভার ফেলিওরে আক্রান্ত হয়েছেন।
লিভার ক্ষতি না করে কীভাবে হলুদের সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করবেন?
হলুদ সত্যিই উপকারী – তবে সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি।
ব্যবহার করার নিয়ম:
1.নির্ধারিত মাত্রায় থাকুন:
সাধারণত প্রতিদিন ৫০০–১০০০ মিলিগ্রাম কুরকুমিন যথেষ্ট। বেশি খেলেই বেশি উপকার – এই ধারণা ভুল।
2. পিপারিন থেকে সাবধান:
কালো মরিচের নির্যাস (পিপারিন) শরীরে কুরকুমিনের শোষণ বাড়ায়, কিন্তু এটি লিভারে চাপ দিতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি কোনো ওষুধ খেয়ে থাকেন।
3. চক্রাকারে ব্যবহার করুন:
হলুদ প্রতিদিন না খেয়ে একটু বিরতি দিয়ে দিয়ে খান – এতে শরীরও রিকভার করার সময় পাবে।
4. অ্যালকোহল বা লিভারে চাপ ফেলা অন্য সাপ্লিমেন্টের সঙ্গে মেশাবেন না।
5. লিভার সমস্যা থাকলে বা নিয়মিত ওষুধ নিলে অবশ্যই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
হলুদের গুণ অনেক, কিন্তু সেটি তখনই কার্যকর হবে যখন আপনি তা সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। অন্যথায়, যেভাবে রবার্টের মতো রোগীর ক্ষেত্রে ঘটেছে, তেমন মারণ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
🔍 তাই সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে নিজের শরীর, বর্তমান ওষুধ, ও প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নিন – এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিছুতেই উচ্চমাত্রায় হলুদ খান না।
