Maha Shivratri 2023: জানুন শিবরাত্রি ২০২৩ সময়সূচি, পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র, পুজো পদ্ধতি এবং প্রচলিত গল্প

Share It!

Maha Shivratri 2023 in bengali:

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে মহাশিবরাত্রি (Maha Shivratri) পালিত হয়। এ বছর মহাশিবরাত্রি ১৮ ফেব্রুয়ারি (শনিবার)। সনাতন শাস্ত্রে বর্ণিত আছে যে মহাশিবরাত্রিতে ভগবান মহাদেব ও মা পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। তাই এই দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই উপলক্ষে, প্রচুর সংখ্যক ভক্ত বাবার দর্শন নিতে শিব মন্দিরে আসেন। এটি একটি ধর্মীয় বিশ্বাস যে মহাশিবরাত্রিতে ভক্তি সহকারে মহাদেব এবং মা পার্বতীর পূজা করলে ভক্তের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়। সেই সাথে দুঃখ, সংকট এবং কষ্ট দূর হয়। একই সঙ্গে অবিবাহিতদের বিয়েরও সুযোগ তৈরি হয়। এ জন্য অবিবাহিত মেয়েরা মহাশিবরাত্রিতে শিবের পূজা করেন। আসুন জেনে নিই মহাশিবরাত্রির পুজোর শুভ সময় ও পদ্ধতি:

Maha Shivratri 2023

মহা শিবরাত্রির শুভ সময়

নিশীথ যুগে মহাশিবরাত্রির পূজা করার বিধান শাস্ত্রে আছে। এই বছরে ১৮ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রি পালিত হবে। ২০২৩ সালে, কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি ১৮ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাত ৮:০২ (8:02 pm) মিনিট থেকে শুরু হবে এবং পরের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) বিকেল ৪:১৮ (4:18 pm) মিনিটে শেষ হবে। রাতের বেলায় ভক্তরা মহাদেব ও মাতা পার্বতীর পূজা করতে পারেন। এছাড়া দিনের বেলাও পূজা করা যায়। একই সাথে, শুধুমাত্র ১৮ ফেব্রুয়ারি উপোস করা যাবে।

18 ফেব্রুয়ারী দিনের সময়সূচি (English Time)

শুভ – সকাল 08.22 টা থেকে 09.46 টা পর্যন্ত
চর – দুপুর 12.35 PM থেকে 02.00 PM
লাভ- দুপুর 02.00 PM থেকে 03.24 PM
অমৃত – 03.24 PM থেকে 04.49 PM

18 ফেব্রুয়ারি রাতের সময়সূচি (English Time)

লাভ – 06.13 p.m. থেকে 07.49 p.m.
শুভ – 09.24 PM থেকে 10.59 PM
অমৃত – 10.59 PM থেকে 19 ফেব্রুয়ারি 12.35 AM।
পরিবর্তনশীল – 12.35 AM থেকে 19 ফেব্রুয়ারি 02.10 AM পর্যন্ত।
সুবিধা- 05.21 AM থেকে 19 ফেব্রুয়ারি 06.56 AM পর্যন্ত।

আরো পড়ুন: নরেনের এই গল্প আমাদের কঠিন মানসিকতার পরিচয় শেখায়

শিবরাত্রি পুজো করার পদ্ধতি

  • এই দিনে আপনি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠে ভগবান শিবকে স্মরণ করে দিন শুরু করুন।
  • এরপর প্রতিদিনের আচার-অনুষ্ঠান থেকে অবসর নিয়ে গঙ্গাজল যুক্ত জলে স্নান করুন।
  • এবার আম নিবেদন করার পর স্নান করে নিজেকে শুদ্ধ করুন।
  • এর পর সাদা পোশাক পরুন।
  • এখন সবার আগে ভগবান সূর্যকে জল নিবেদন করুন।
  • এরপর ফল, ফুল, ধূপ, দীপ, অক্ষত, ভাং, ধতুরা, দুধ, দই ও পঞ্চামৃত দিয়ে শিব ও মাতা পার্বতীর পূজা করুন।
  • শেষে,
  • গাঁজা, ধতুরা, জায়ফল, ফল, মিষ্টি, মিষ্টি পান, সুগন্ধি এবং খির নিবেদন করুন।
  • সারা দিন ধ্যান করুন এবং আরতি নিবেদন করে ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর কাছে প্রার্থনা করুন।
  • সন্ধ্যায় বা রাত্রিবেলা, আবার একবার ভগবান শিবের পূজা করুন।
  • রাতে অন্যদের মধ্যে খীরের প্রসাদ বিতরণ করুন এবং প্রসাদ আকারে খীর সেবন করে পরান করুন।
  • রাত্রি জাগরণে শিবভজন, মন্ত্র, শ্লোক, স্তোত্র, চালিসা ইত্যাদি পাঠ করুন।
Read More:  গান্ধীজয়ন্তী ২০২২: জানুন গান্ধিজীর আদর্শ ও তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা। এবছর কোন বারে গান্ধীজয়ন্তী

আরো পড়ুন: বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার গল্প: এই গল্প সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে শেখায় 

মহা শিবরাত্রির শিব ও পুস্পাঞ্জলির মন্ত্র

  • ওম শিবায় নমঃ:
  • ওম হরুন জুন সাহ। ওম ভু ভুবাঃ স্বাঃ। ওম ত্রিম্বকম যজামহে সুগন্ধি সুস্থিবর্ধনম্। উর্ভারুকমিব বধনমৃত্যুরমুক্ষ্য মামৃত্‌। স্বাঃ ভুভঃ ভুঃ ওম। সাহ লাউস ওম ॥
  • ওম ওম শ্রী শিব গৌরীমায়া শ্রী ওম
    শিবায় নমঃ
  • ওম ত্রিনেত্রায় নমঃ:

মহাশিবরাত্রির ব্রতকথা বা গল্প

মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা অনুসারে চিত্রভানু নামে এক শিকারী ছিলেন। পশু মেরে সংসার চালাতেন। তিনি একজন মহাজনের কাছে ঋণী ছিলেন, কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। রাগান্বিত মহাজন শিকারীকে শিবমঠে বন্দী করে। কাকতালীয়ভাবে সেদিন ছিল শিবরাত্রি। শিকারী ধ্যানমগ্ন হয়ে শিব সম্পর্কিত ধর্মীয় আলোচনা শুনতে থাকে। চতুর্দশীতে শিবরাত্রির উপবাসের গল্পও শুনেছেন।

সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মহাজন তাকে তার কাছে ডেকে ঋণ পরিশোধের কথা বলে। পরের দিন সমস্ত ঋণ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিকারীকে বন্ধন থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার রুটিন অনুযায়ী সে বনে শিকারে বের হয়। কিন্তু সারাদিন কারাগারে থাকার কারণে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েন তিনি। শিকারের সন্ধানে সে অনেক দূরে চলে যায়। অন্ধকার হয়ে গেলে সে ভাবল যে তাকে বনে রাত কাটাতে হবে। তখন সেই বনে একটি পুকুর পাড়ে একটি লতা গাছে উঠে রাত কাটানোর অপেক্ষায় ছিল।

একটি বেল গাছের নিচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল যা বেল পাতায় আবৃত ছিল। চিত্রভানু এবার রাত কাটাবার জন্য শিবির তৈরির সময় তিনি যে ডালগুলি ভেঙেছিলেন তা দুর্ঘটনাক্রমে শিবলিঙ্গে পড়েছিল। এভাবে সারাদিন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত শিকারীর উপবাসও করা হলো এবং তার সাথে সাথে শিবলিঙ্গে বেল পাতাও ফেলা হলো। যেকোন গভীর রাত হলো একটার পর একটি গর্ভবতী হরিণী জল খেতে পুকুরে পৌঁছায়।

শিকারী ধনুকের উপর তীর রেখে দড়ির টান দিতেই হরিণী বলল- ‘আমি গর্ভবতী। আমি শীঘ্রই জন্ম দেব। আপনি একই সাথে দুটি আত্মাকে হত্যা করবেন, যা ঠিক নয়। সন্তান প্রসবের পরই আমি তোমার সামনে হাজির হব, তারপর আমাকে মেরে ফেল।’

Read More:  বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১, থিম, স্লোগান। World Environment Day in Bengali

শিকারী ফাঁস খুলে দিল এবং হরিণটি বুনো ঝোপের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। নৈবেদ্য এবং তীরের দড়ি আলগা করার সময়, কিছু বেল পাতা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে বা খসে গিয়ে শিবলিঙ্গে পড়েছিল। এভাবে অজান্তেই প্রথম প্রহরের পূজাও সম্পন্ন হয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে আরেকটি হরিণী বেরিয়ে এল।

তখন তাকে দেখে হরিণী বিনীতভাবে অনুরোধ করল- ‘হে শিকারী! আমি একজন কুমারী। আমি আমার প্রেয়সীর খোঁজে ঘুরে বেড়াই। আমি আমার স্বামীর সাথে দেখা করে তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসব।’ শিকারী তাকেও যেতে দিল দুবার শিকার হারানোর কারণে সে বিচলিত হয়েছিল। সব ধরনের চিন্তায় মগ্ন ছিলেন তিনি। তখন রাতের শেষ প্রহর। এবারও কিছু বেল পাতা ধনুকের স্পর্শে শিবলিঙ্গে পড়লে দ্বিতীয় পর্বের পূজাও সম্পন্ন হয়।

এরপর সেখান থেকে আরেকটি হরিণী তার বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়ে আসে। শিকারীর জন্য এটি ছিল একটি সুবর্ণ সুযোগ। ধনুকের উপর তীর বসাতে তার সময় লাগেনি। তিনি তীর ছাড়তে যাচ্ছিলেন এমন সময় হরিণ বলল- ‘ওরে শিকারী! এই শিশুদের বাবার কাছে হস্তান্তর করে আমি ফিরে আসব। এখন আমাকে মারবেন না।’ শিকারী হেসে বললো- ‘আমার সামনে আসা শিকারকে ছেড়ে দেবার মতো বোকা আমি নই। এর আগেও দুবার শিকার হারিয়েছি। আমার সন্তানেরা নিশ্চয়ই ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছে।

উত্তরে হরিণী আবার বললেন- তোমার সন্তানদের স্নেহ যেমন তোমাকে কষ্ট দেয়, আমিও তেমন। হে শিকারী! আমাকে বিশ্বাস করুন, আমি তাদের বাবার কাছে রেখে অবিলম্বে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। হরিণের বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর শুনে শিকারীর তার প্রতি করুণা হল। তিনি সেই হরিণীকেও পালাতে দেন শিকারের অভাবে এবং ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে শিকারী অজান্তে লতা গাছে বসে থাকা বেলপাতা ভেঙে ফেলে এবং নিচে ফেলে দিতে থাকে।

ভোর যখন ভাঙতে চলেছে, ঠিক সেই পথেই এক প্রবল হরিণ এল। শিকারী ভেবেছিল সে অবশ্যই শিকার করবে। শিকারীর কাণ্ড দেখে হরিণ ভদ্র কণ্ঠে বলল- ‘ও শিকারী! তুমি যদি আমার সামনে তিনজন মৃগীরোগী ও ছোট শিশুকে হত্যা করে থাক, তাহলে আমাকেও হত্যা করতে দেরি করো না, যাতে তাদের বিচ্ছেদে এক মুহূর্তও কষ্ট না হয়। আমি সেই হরিণের স্বামী। আপনি যদি তাদের জীবন দিয়ে থাকেন, তবে দয়া করে আমাকেও জীবনের কিছু মুহূর্ত দিন। তার সাথে দেখা করার পর আমি আপনার সামনে হাজির হব।’

Read More:  Independence Day: পতাকার তিন রঙের তিন বৈশিষ্ট, ইতিহাস। Independence Day in Bengali

হরিণের কথা শুনে সারা রাতের ঘটনা ঘোরে শিকারীর সামনে। সে হরিণকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। তখন হরিণ বললো- ‘আমার তিন স্ত্রী যেভাবে প্রতিশ্রুতি নিয়ে চলে গেছে, আমার মৃত্যুর পর তারা তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে না। অতএব, আপনি যেমন তাকে আস্থাভাজন হিসাবে রেখে গেছেন, আমাকেও যেতে দিন। আমি শীঘ্রই তাদের সবাইকে নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব।’

শিকারী তাকেও যেতে দিল এভাবেই সকাল হলো। অজান্তেই উপবাস, রাতে জেগে থাকা এবং শিবলিঙ্গে বেলপত্র অর্পণের মাধ্যমে শিবরাত্রির পূজা সম্পন্ন হয়। কিন্তু অজান্তে করা পূজার ফল তিনি পেয়েছেন। শিকারীর হিংস্র হৃদয় শুদ্ধ হয়ে গেল। তাঁর মধ্যে ভগবদ্শক্তি বাস করতে শুরু করে।

কিছুক্ষণ পর হরিণটি তার পরিবার নিয়ে শিকারীর সামনে হাজির হয়, যাতে সে তাদের শিকার করতে পারে, কিন্তু বন্য প্রাণীদের এমন সত্যবাদিতা, সত্যবাদিতা এবং সম্মিলিত ভালবাসা দেখে শিকারীকে খুব অপরাধী মনে হলো। তিনি হরিণ পরিবারে জীবন দিয়েছেন। অজান্তেই শিবরাত্রির উপবাস পালন করলে শিকারী মোক্ষ ও শিবলোক লাভ করেন।

আরো পড়ুন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – জানুন বিস্তারিত

Leave a Comment