আমাদের শরীরের সৌন্দর্যের ৭০% নির্ভর করে আমাদের ত্বকের উপর। টানটান স্বাস্থোজ্জ্বল ত্বক শুধু সৌন্দর্য্যই নয়, আমাদের ব্যাক্তিত্বের উপরেও প্রভাব ফেলে। গায়ের রং চাপা হোক ক্ষতি নেই তবে সেই ত্বকে প্রাণ থাকা চাই। নিস্প্রাণ ত্বকে গোটা, বলিরেখা, কালো দাগ, ছোপ থাকলে তা সৌন্দর্য তো বটেই, আপনার ব্যাক্তিত্বহানিও ঘটায়। Dermatologist বা ত্বকের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কয়েকটা সিটিংয়েই আপনার ত্বকের হারানো বসন্ত ফিরিয়ে আনতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার ভারী মানিব্যাগটি থেকে অন্ততঃ হাজার দশেক টাকা খসবে।
অথচ আপনি কি জানেন ঘরে থাকা টুকটাক জিনিসেই আপনার ত্বক ঝকঝকে তকতকে হয়ে উঠতে পারে? যদি না জেনে থাকেন তবে আজকে জেনে নিন ঘরোয়া উপায়ে ত্বককে কিভাবে স্বাস্থোজ্জ্বল করবেন।
Table of Contents
ত্বকের প্রকারভেদ
একজন বয়স্কের দেহের মোট ওজনের প্রায় 15% এর জন্য ত্বক দায়ী। এটি শরীরের বাইরের প্রয়োজনীয় অঙ্গ, পেশী, টিস্যু ইত্যাদি রক্ষা করে। এইভাবে একটি স্বাস্থ্যকর ত্বক মানুষকে ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে, তাপমাত্রা পরিবর্তন সাহায্য করে। সঠিক ভাবে সানস্ক্রিন প্রয়োগ, হাইড্রেটেড থাকা এবং ভিটামিন A,C,E এবং K সমৃদ্ধ খাবারগুলি আপনার ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করতে পারে।
এপিডার্মিস ত্বকের বহিরাগত স্তর, যা জলরোধী আচ্ছাদন সরবরাহ করে এবং ত্বকে রঙ দেয়। এপিডার্মিসে অবস্থিত মেলানোকাইটস (melanocytes) নামক বিশেষ কোষ দ্বারা উত্পাদিত মেলানিন (melanin) রঙ্গক হলো ত্বকের রঙের আসল কারণ।
ত্বক চেনার সহজ উপায়
আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশে মূলত তিন ধরণের ত্বক দেখা যায়। আসুন নিজের ত্বককে চেনার উপায় বলি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোবার আগে একটা টিস্যু নিন,এবার সেই টিস্যু নিজের নাকের দুপাশে, কপালে, গালে, থুতনিতে ঘসুন।
- যদি টিস্যুতে তেলতেলে ভাব থাকে তবে আপনার Oily skin অর্থাৎ তৈলাক্ত ত্বক।
- যদি টিস্যুতে তৈলাক্তভাব একেবারেই না থাকে তাহলে আপনার Dry skin বা শুস্ক ত্বক।
- যদি নাকের দুপাশে ও থুতনিতে সামান্য তেলতেলে ভাব থাকে ও বাকি কপাল, গাল শুস্ক হয় তবে আপনার Normal skin বা স্বাভাবিক ত্বক।
ত্বকের নিস্প্রাণতার লক্ষণসমূহ
ত্বকে গোটা বা ব্রণ হলে খুব সহজেই আমরা চোখে দেখে বুঝতে পারি। কিন্তু আপনার ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ রয়েছে কিনা তা কিভাবে জানব? ত্বকের চিকিৎসকের মতে—
১. কমবয়সে চামড়া কুঁকড়ে যাওয়া
২. ছোপ হয়ে যাওয়া
৩. চুলকুনি ও ফুসকুড়ি হবার প্রবণতা
৪. লালচে ভাব ও লালচে গোটা বের হওয়া
৫. গাল টিপে ধরলে ছেড়ে দেওয়ার পর যদি বেশীক্ষন চামড়ায় গর্ত থেকে যায়
উপরিউক্ত কোনো একটি লক্ষণও যদি আপনার মূল্যবান ত্বকে থেকে থাকে তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিম্নে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়ে সত্বর ত্বকের চর্চা শুরু করুন।
আরো পড়ুন: 2021 টাকা জমানোর সবচেয়ে ভালো উপায়।
ঘরোয়া রুপচর্চা
১. একটা বাটিতে ১ চামচ মুলতানি মাটি, ২ চামচ টকদই, আধ চামচ মধু ও আধ চামচ গোলাপজল মিশিয়ে তা মুখে লাগিয়ে রাখুন। মিনিট পনেরো পর ঠান্ডাজলে ধুয়ে ফেলুন। মুলতানি মাটি প্রাকৃতিক ক্লিনজারের কাজ করে, এর সাহায্যে আপনার রোমকুপে লেগে থাকা ধুলোময়লা পরিস্কার হয়ে চুলকুনি, র্যাশ থেকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি বাকি উপকরণ গুলি ত্বককে ঝকঝকে বানাবে।
২. ত্বকে কালোভাব থাকলে দই-হলুদের প্যাক লাগিয়ে ফেলুন। প্রথমে একটা বাটি ঠান্ডা দইয়ের মধ্যে এক চিমটে গুঁড়ো হলুদ দিন। ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটি মুখ, গলা, হাত ও অন্যান্য কালো হয়ে যাওয়া জায়গায় লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। হলুদ আপনার ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে সহায়ক।
৩. ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে অ্যালোভেরার জুরি মেলা ভার। অ্যালোভেরার পাতা চিঁড়ে তার শ্বাসটা নিয়ে মুখে ঘসুন। ত্বক হবে টানটান ও স্বাস্থোজ্জ্বল।
৪. পরিমানমতো দুধে খানিকটা বেসন ও কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে রোজ ত্বকে পনেরোমিনিট লাগিয়ে রাখলে বলিরেখা, ছোপ জাতীয় সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. শসার রস ও পাতিলেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে খুবই উপকার পাওয়া যায়। শসার রস প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজারের কাজ করে পাশাপাশি লেবুর রস ন্যাচারাল ব্লিচ। ফলতঃ ত্বক চকচকে ও প্রাণবন্তও হবে এবং গায়ের রংও খুলবে।
ত্বকের বাইরে থেকে পরিচর্যা করার আগে মাথায় রাখতে হবে শরীর ভেতর থেকে সুস্থ রয়েছে কিনা। অনেকসময় শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবং পুষ্টির অভাবেও আমাদের ত্বক নিস্প্রাণ হয়ে যায়। তাই প্রথমে নিজের শরীরকে গুরুত্ব দেওয়া সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
নিচে উল্লেখিত অভ্যেসগুলো নিয়মিত মানলেও আপনার ত্বকের চমক একেবারে চাঁদের মতো ঝকঝক করবে।
আরো পড়ুন: হটাৎ মাথা ব্যাথা ? মাথা ব্যাথা সারিয়া ফেলার ৩টি সহজ যোগা
সুষম আহার সেবন করা
পেট পরিস্কার এবং হজম ভালো হলে শরীরের চামড়া টানটান থাকবে। যত বেশী সম্ভব ফলমূল, শাকসবজি, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার নিজের ডায়েটে রাখুন।
পরিমান মতো জল খাওয়া
ত্বকের যত্ন ও ময়লা দূর করতে জলের প্রয়োজন সর্বাগ্রে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পান করুন। স্নানের সময় গরম ও ঠান্ডা জল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন সৌন্দর্যের চাবিকাঠি রয়েছে জলের হাতে।
আরো পড়ুন: পেটের মেদ কমানোর সেরা ১৫ টি উপায়
ত্বকের পরিচ্ছন্নতা
ত্বকের স্বাস্থ্য নির্ভর করে নির্মল ও পরিচ্ছন্ন রাখার উপরে। নিয়মিত সাবান, ফেসওয়াশ সহযোগে স্নান, ঘর্মাক্ত জামাকাপর বদলানো, ঘরোয়া ফেসপ্যাকের ব্যবহার ত্বকের জন্য সর্বৈব প্রয়োজন।
ঘুমের পরিমান সঠিক রাখা
ধরুন ত্বককে পুষ্টি, রুপচর্চার উপাদান সবই দিলেন তবে ত্বককে বিশ্রাম দিলেন না, তাহলে কিন্তু কিছুই হবে না। রোজ ৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন আপনার ত্বকের, নতুবা ত্বকের স্বাভবিকতা বিঘ্নিত হবে। উল্লেখ্য, ঘুমোনোর আগে অবশ্যই মেকআপ তুলে নেবেন।
আরো পড়ুন: 2021 Lockdown বাড়ি থেকে Online অর্থ উপার্জন করার উপায়
ত্বকে সঠিক রোদ হাওয়া লাগানো
ত্বকের বিকাশ ও সজীবতা ধরে রাখার জন্য রোদ হাওয়ার বিকল্প হয় না। তবে খুব কড়া রোদ চামড়া পুড়িয়ে দিতে পারে। ফলতঃ রোদ থেকে সাবধান!! দরকার পড়লে সবসময় সঙ্গে ছাতা রাখুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
দেহের জন্য যেমন শরীরচর্চা প্রয়োজন, ত্বকের জন্যও তেমন ব্যায়াম বা YOGA প্রয়োজন। ত্বকে রক্ত চলাচলে সহয়তা করে ব্যয়াম। আপনি যখন ব্যায়াম করবেন বা হালকা jogging করবেন তখন আপনি ঘামতে শুরু করবেন। তখন ওই ঘামের মধ্য দিয়ে আপনার শরীরে জমে থাকা Toxin বেরিয়ে যাবে, এতে আপনার ত্বকের ঔজ্বল্ল্য বেড়ে যাবে।
অনেক বিশেষজ্ঞা সূর্য নমস্কার দিয়ে দিন শুরু করার পরামর্শ দেয় কারণ এটি শরীরকে অনেক রোগ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। এটি মনকে চাপ এবং উদ্বেগ থেকেও দূরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভুজঙ্গাসন, বকাসন, শবাসন এবং উত্তানাসন করা ত্বকের গঠন উন্নত করতে এবং রোগগুলিকে উপশম করতে খুব কার্যকর।
প্রসঙ্গত, উপরিউক্ত টিপস ও ট্রিকসগুলি সাধারণ ও নিয়মিত ব্যবহারের জন্য, তবে আপনার ত্বকে যদি অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তবে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ।
Watch Web story – Click here