ড. মনমোহন সিং ভারতের ইতিহাসে একজন বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদই নন, বরং একজন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ যিনি ভারতের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন।
ড. মনমোহন সিং, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, শৈশব থেকেই তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে অসাধারণ অধ্যবসায় এবং মেধার পরিচয় দিয়েছেন।
তার শৈশবের গল্প শুনলে বোঝা যায় কীভাবে একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে ভারতের অন্যতম সেরা নেতা এবং অর্থনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন।
Table of Contents
শৈশবকাল
মনমোহন সিং-এর জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান পাকিস্তান) পাঞ্জাব প্রদেশের গাহ নামক একটি গ্রামে।
তার পরিবার ছিল একেবারেই সাধারণ। তাদের জীবিকা চলত কৃষি এবং ছোটখাটো ব্যবসার উপর নির্ভর করে।
মনমোহনের বাবা, গুরমুখ সিং, ছিলেন একজন সৎ ও পরিশ্রমী ব্যক্তি, যিনি সবসময় তার সন্তানদের শিক্ষা এবং নৈতিকতার গুরুত্ব বোঝাতেন।
প্রাথমিক শিক্ষা ও সংগ্রাম
গাহ গ্রামে কোনো উন্নত বিদ্যালয় ছিল না। ছোট্ট মনমোহন গ্রামের একটি সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। সাইকেল কিংবা গাড়ি তখন তার পরিবারের জন্য স্বপ্নের মতো ছিল।
প্রতিদিন কয়েক মাইল পায়ে হেঁটে তিনি স্কুলে যেতেন। তার এই অধ্যবসায়ের কারণেই শিক্ষকরা তাকে খুবই পছন্দ করতেন এবং তার মেধার প্রশংসা করতেন।শৈশবে মনমোহন সিং-এর আর্থিক পরিস্থিতি খুবই কঠিন ছিল।
তার পরিবারকে অনেক সময় এক বেলা খেয়ে দিন কাটাতে হতো। কিন্তু এই দারিদ্র্য কখনো তাকে দমাতে পারেনি। বরং শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ তাকে আরও অনুপ্রাণিত করত।
আপনি কি জানেন?
ড. মনমোহন সিং সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে যা অনেকেই জানেন না। উদাহরণস্বরূপ:
তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় ক্লাসের সর্বোচ্চ নম্বরধারী ছিলেন।
১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বে এমন কিছু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যা ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায়।
তিনি ভারতের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি সম্পূর্ণ সৎভাবে নিজের সম্পদ ঘোষণা করেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান পাকিস্তান) পাঞ্জাব প্রদেশের একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পর তার পরিবার ভারতে চলে আসে।
প্রাথমিক শিক্ষার পরে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার উচ্চ শিক্ষার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার
১৯৯১ সালে যখন ভারত একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে ছিল, তখন ড. সিং অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তার নেতৃত্বে ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং অর্থনীতি গতি পায়। তার সংস্কার উদ্যোগের ফলে ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়।