40-বছরের পরে ওজন বৃদ্ধি শুধুমাত্র চেহারা জন্য সমস্যা তাই নয়, ইহা অনেক রোগের জন্যও দায়ী। চল্লিশের ঘরে প্রবেশের পরে বেশিরভাগ লোকেদের শরীরের আকারে, বিশেষত মহিলাদের মধ্যে এর পরিবর্তন বেশ চোখে পরে। এর পিছনে মূল কারণ হচ্ছে মেনোপজই। এছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণগুলিও তাৎপর্যপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই করোনা মহামারীটির কারণে আমাদের জীবন আরও নিষ্ক্রিয় হয়ে উঠছে। যার ফলস্বরূপ ওজন বৃদ্ধি।
অনিয়মিত খাদ্য অভ্যাস একটি বিশেষ কারণ যা অপ্রয়োজনীয় ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। অতিরিক্ত মেদ শরীরে জমে গিয়ে ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যা ধীরে ধীরে TYPE-2 ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এমনকি ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগের দিকেও পরিচালিত করে। এখানে কয়েকটি সহজ উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি 40 বছরের পরেও কীভাবে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন তা জানতে পারবেন।
Table of Contents
হরমোনগত পরিবর্তনগুলি সামলাতে চেষ্টা করুন
মহিলাদের মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনগুলি আসলে ওজন বাড়িয়ে তোলে। পেরিমেনোপজ এবং মেনোপজের সময় এস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন গুলি ওঠানামা করতে থাকে।
এই হরমোনগুলি সেক্স লাইফ থেকে শুরু করে আপনার ক্ষিদে পর্যন্ত দেহের সমস্ত কার্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোনজনিত মাত্রার ওঠানামার কারণে আপনি মেনোপজের কাছে যাওয়ার সাথে সাথে ইহার প্রভাবে আপনার হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং আপনার পেশির ভরও কমতে থাকে। হরমোনীয় পরিবর্তনগুলি দেহের সংমিশ্রণ, চর্বি সংগ্রহ এবং চর্বি বিতরণে তথা পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে।
এই পরিবর্তনগুলি ইতিবাচকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করুন। অন্য মহিলাদের সাথে কথা বলুন যারা মেনোপজের দিকে চলেছেন। আপনি জানেন যে এই পরিবর্তনগুলি সাধারণ নিয়ম অনুসারে সংঘটিত হয়। এই সময় দেহে Calcium কমতে থাকে ফলে হাড়ের শক্তিও কমতে থাকে। আপনি Calcium যুক্ত খাবার বা ক্যালসিয়াম পরিপূরকগুলির (Supplements) জন্য ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ১৩ টি সহজ উপায়
আপনার বিপাকের হার বাড়ান
হরমোনের এই পরিবর্তনগুলি ধীর বিপাকের (metabolism) হারের জন্যও দায়ী। আপনার বিপাকীয় হার আপনার বয়সের সাথে সাথে সাধারণত ধীর হয়ে যায়। আপনার নিম্ন স্তরের ইস্ট্রোজেন হরমোন, আপনার বিপাককে ধীর করে তোলে এবং অবশেষে, আপনি ওজন বাড়ানো শুরু করেন।
এর থেকে বাঁচার সব চেয়ে ভালো উপায় হলো আপনাকে সক্রিয় বা যথাযত active থাকতে হবে। এর জন্য আপনি কোনো ব্যায়াম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদান করতে পারেন এবং নিয়মিত যোগা (Yoga) করতে পারেন। আপনি চাইলে বাড়িতে থেকেও free hand exercise করতে পারেন।এছাড়াও কার্ডিওভাসকুলার অনুশীলন করা যেতে পারে কোনো প্রশিক্ষিত trainer কাছে।
আরও পড়ুন: জাঙ্ক ফুড শরীরে কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে – জানুন ৯টি সমস্যা
ফাইবার সমৃদ্ধ ডায়েট রাখুন
প্রতিদিন 30 গ্রাম ফাইবার নেওয়ার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে ওজন হ্রাস করতে, আপনার রক্তচাপ হ্রাস করতে এবং ইনসুলিনে আপনার দেহের প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে।
ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন:
আপেল, পেয়ারা, বার্লি , Oats, Avocados ইত্যাদি খেতে পারেন।
পেশী ভরযুক্ত বা শক্তিশালী করুন
আপনি 40 এর কাছে যাওয়ার সাথে সাথে আপনি আপনার পেশীর ভরগুলি বা পেশীর শক্তি হারাতে শুরু করেন। আপনার শরীরের ক্যালোরি বার্ন হলো আপনার পেশীর শক্তির হ্রাস পাওয়া। ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন স্তর কমতে থাকা আপনার পেশীর ভরের হ্রাসের মূল কারণ।
কোনো Gym এ গিয়ে প্রতিরোধ প্রশিক্ষণ বা আপনার শরীর অনুযায়ী আপনি ওজন তুলতে পারেন এতে আপনার পেশীর ভর তৈরি বা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। অতিরিক্ত চর্বি কমাতে এবং আপনার বিপাককে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করে। এই অনুশীলনটি আপনার হাড়কে দৃঢ় এবং শক্তিশালী রাখতেও সাহায্য করে।
প্রতিরোধ প্রশিক্ষণ এর উদহারণ:
আপনি কোনো জল ভর্তি বোতল নিয়ে সেই weight হাতে করে তুলতে পারেন। এছাড়াও কোনো Dumbbell ball নিয়েও এটা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: Meditation এর উপকারিতা, কৌশল, সময়
মানসিক চাপ বা Stress কে কমানোর চেষ্টা করুন
মানসিক চাপ এই বয়সে খুব বেশি শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। খুব বেশি মানসিক চাপ আপনার দেহকে কর্টিসল (cortisol) হরমোনকে প্ররোচিত করে। কর্টিসল হরমোন হলো স্ট্রেস হরমোন (Primary Stress Hormone)।
কর্টিসোলের লেভেল যদি শরীরে কমে যায় তাহলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পাবে। তখন এই sugar level সঠিক রাখার জন্য আপনি বেশি পরিমান চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি করে খেয়ে ফেলবেন। সুতরাং তখন আপনার পেটের মেদ বাড়তে শুরু করবে – এটি ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো রোগের জন্য বিশেষ দায়ী।
সুতরাং আপনাকে জানতে হবে কিভাবে আপনি আপনার স্ট্রেসকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করবেন। আপনি যোগ, ধ্যান, বই পড়া, আর্ট থেরাপি এইসব চয়ন করতে পারেন। আপনার জন্য যেটা উপযুক্ত হবে আপনি সেটাই গ্রহণ করুন। আপনার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ হ্রাস করতে আপনি একজন মনোবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: ওজন কমানোর ৫ টি সেরা Health Drinks
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন
দৈনন্দিন দায়িত্বের কারণে, Career এর চাপ, সংসারের ঝামেলা ইত্যাদি কারণে আপনি হয়তো ব্যায়ামটিকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন না। শরীরের জয়েন্ট এবং পেশীগুলিতে বয়সের সাথে সাথে আপনাকে কম সক্রিয় করে তোলে। এই অনুশীলনের অভাব ওজন বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।
আপনি যদি প্রতিদিন Gym এ যেতে নাও পারেন তবে আপনি হাঁটাচলা, সাঁতার কাটা বেছে নিতে পারেন। আপনি যেটা করতে পছন্দ করেন এমন কিছু ওয়ার্কআউট সন্ধান করুন। শরীরে কোনো Injury বা হার্ট এর সমস্যা না হলে সাইকেল চালানোও বেশ উপকারী।
প্রতিদিন ধারাবাহিক অনুশীলন আপনার বিপাক পক্রিয়াকেও সঠিক ভাবে চালনা করে। এন্ডোরফিন নাম একটি হরমোন আছে যাকে “হ্যাপি হরমোন” বলা হয়, যা অনুশীলনের সময় প্রকাশিত হয় এবং আপনার মেজাজকে বেশ উন্নত করে।
এছাড়াও নিয়মিত অনুশীলনে ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। তাই 40 বছরের কাছাকাছি এলে আপনি এইগুলো ভালো করে মেনে চলতে পারেন এতে আপনার শরীর সুস্থ এবং ভালো থাকবে।