বর্তমান যুগ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। আর এই যুগে ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমরা যারা শহরে বাস করি তাদের কাছে ইন্টারনেট সহজলভ্য হলেও যারা কোনো প্রত্যন্ত গ্রামে বা কোনো remote area বাস করেন তাদের কাছে ইন্টারনেট এখনো হাতের বাইরে। এছাড়া আমরা যারা শহরের বাসিন্দা তারা কখনো কোনো remote area ঘুরতে গেলে এখনোও সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সবসময় ইন্টারনেট সুবিধা পাইনা।
কিন্তু ধরুন আপনি কোনো remote area গেছেন এবং চাইলেই আপনি সহজে ইন্টারনেটের মায়াময় দুনিয়ায় অবাধ বিচরণ করতে পারছেন তাহলে কেমন হবে ? ভাবছেন নিশ্চই যে এটাও কি সম্ভব? কিন্তু আপনার তথা সারা বিশ্বের এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করতে চলেছে মার্কিন সংস্থা স্পেস-এক্স (SpaceX)– এর নতুন প্রজেক্ট স্টারলিঙ্ক (Starlink)। এখন কথা হচ্ছে কি এই স্টারলিঙ্ক।
Table of Contents
Starlink কি ?
স্টারলিঙ্ক (Starlink) হলো একটি High Speed broadband ইন্টারনেট পরিষেবা যার দ্বারা প্রতিটা মানুষ পৃথিবীর প্রতিটা কোনায় খুব সহজেই ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে পারেন। এই ইন্টারনেট পরিষেবা মূলত গ্রাহকদের দেওয়া হবে স্যাটালাইটের মাধ্যমে।
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আমাদের একটা বেসিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের (Infrastructure) যেমন সেল টাওয়ার, ব্রডব্যান্ড, Optical fiber বা ISP (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) এর প্রয়োজন পরে। কিন্তু পৃথিবীর সব জায়গায় এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার না থাকায় পৃথিবীর সর্বত্র এই ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যায় না। ২০১৮ এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এখনো ইন্টারনেটের আওতায় আসেনি।
কিন্তু স্টারলিঙ্ক এমনই একটি ইন্টারনেট মাধ্যম যা দিয়ে আপনি পৃথিবীর সর্বত্র ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে পারেন কেবল মাত্র একটি মাত্র রিসিভারের (receiver) সাহায্যেই।
Starlink এর অবিষ্কর্তা কে?
স্পেস-এক্স এর ফাউন্ডার Elon Musk ২০১৫ সালে এই প্রজেক্টের কথা প্রথম ঘোষণা করেন। কিন্তু ঘোষণা করলেই যে কাজ হবে এমন কথা তো নেই তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর গবেষণা আর গবেষণার জন্য প্রয়োজন প্রচুর জায়গা ও। আর সেই ভাবনা নিয়েই এলন মাস্ক ওয়াশিংটনের Redmond ৩০ হাজার Sq.ft একটি জায়গা লিজ্ নেন আর সেখানেই ৬০ জন ইঞ্জিনিয়ার ও ১০০ জন কর্মী নিয়ে শুরু হয় স্টারলিঙ্কের যাত্রা।
২০১৬ সালে এসে এই বিশাল দল স্যাটালাইট তৈরিতে সক্ষম হন। ২০১৬ সালে এলন মাস্ক রেডমন্ডেই আরো ৩০ হাজার sq.ft জায়গা নেন এবং তৈরি হয়ে রিসার্চ সেন্টার। ২০১৭ সালে এসে এই স্যাটেলাইটের বিশাল খরচ কমাতে না পেরে এই সংস্থা আরো একবার চেষ্টা চালান এবং অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৯ সালের ২৪ সে মে এই সংস্থা Lower Earth Orbit পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪০০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৬০ টি স্যাটেলাইট সফল ভাবে পাঠাতে সক্ষম হয়।
এখনো অবধি প্রায় ১৪৪০ টি স্যাটেলাইট পাঠাতে সফল হয় এই সংস্থা। আশা করা যায় ২০২৪ এর মধ্যে প্রায় ১২০০০ এর ও বেশি স্যাটেলাইট প্রেরণ করতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন: Lockdown বাড়ি থেকে Online অর্থ উপার্জন করার উপায়।
কিভাবে কাজ করবে এই Starlink
SpaceX পৃথিবীর বাইরে প্রায় ৩০০টি স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপন করেছে। আপনি এবার পাহাড়ের উপরে বা মাটির তলায় যেখানেই থাকুন না কেন সেখান থেকেই খুব সহজে ইন্টারনেট পেয়ে যাবেন। কারণ পৃথিবীর বাইরের ওইসব স্যাটেলাইট থেকে signal direct আপনার device আসবে।
আমরা বর্তমানে যে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করি সেগুলো পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ফিট দূরত্বে অবস্থান করে যার ফলে ইন্টারনেটের স্পিড কমে যায়। এ ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট গুলির লেটেন্সি (Latency) অত্যন্ত বেশি থাকায় সমস্যা দেখা যায়।
কিন্তু স্টারলিঙ্ক এমন একটি স্যাটেলাইট যাকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪০০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। যা আগের স্যাটেলাইট গুলোর থেকে ৬০গুন কাছাকাছি। তার ফলে পৃথিবী থেকে দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা পেতে পারবো।
আরও পড়ুন: বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১, থিম, স্লোগান
Starlink ব্যবহারের উপায় ও সুবিধা
স্টারলিঙ্ক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্পেস-এক্স গ্রাহক দের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে একটি টার্মিনাল যা অন্যসব ডিভাইসের (Device) মত দেখতে হলেও এর ব্যবহার একটু আলাদা।
এই টার্মিনাল টিকে বাড়ির ছাদে বা বাড়ির বাইরে মাটিতে যেকোনো জায়গায় রাখলেই Starlink নেটওয়ার্ক পাওয়া সম্ভব। টার্মিনালটিকে Install করার পর এটি নিজে থেকেই তার গ্লোবাল পজিশন ঠিক করে নিতে পারে। আলাদা করে এটিকে ঘোরানোর দরকার পরে না। ওপরের স্যাটেলাইট যেদিকে ঘুরবে টার্মিনালটিও সেদিকে ঘুরে যাবে। আর এটিকে active করার জন্য স্টারলিঙ্ক অ্যাপ(App) থেকে activate করতে হবে।
এখনো এটা নিশ্চিত ভাবে জানা যাচ্ছে Starlink ইন্টারনেট প্রায় ৯০ MBPS থেকে ১৫০ MBPS পর্যন্ত স্পিড দিতে সক্ষম হয়েছে।
এখনো অবধি Elon Musk, এর খরচ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানায়নি। তবে খবর পাওয়া যায় ডিভাইস install বাবদ খরচ প্রায় ৪৯৯ ডলার (৩৫০০০ টাকা ) এবং মাসিক বিলের খরচ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৯৯ ডলারের (প্রায় ৭১৮৫ টাকা )কাছাকাছি। যা সাধারণ ভাবে বর্তমান ইন্টারনেট খরচের থেকে বেশ অনেকটাই বেশি।
তবে এই মূল্য ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে বলেই জানিয়েছে মার্কিন সংস্থা। ২০২১ সালের মধ্যে আমেরিকার বেশ কিছু গ্রামে বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন Elon Musk।
আরও পড়ুন: 5G Technology কি? 5G Network এর ক্ষতিকারক দিক
কোন কোন দেশে Starlink পরিষেবা চালু হয়েছে
পৃথিবীর সব দেশ এখনো এই Starlink ইন্টারনেটের সুবিধা পায়নি । এই মুহূর্তে আমেরিকা, কানাডা, UK, জার্মানি, পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় Beta version চালু আছে । এইসব দেশের মানুষ ইচ্ছা মত Starlink ওয়েবসাইটে গিয়ে ইনস্টলেশনের জন্য প্রি-অর্ডার করতে পারেন। Pre-Book করলে কোম্পানির তরফ থেকে দেওয়া হবে একটি Starlink কিট। যাতে থাকছে একটি Router একটি অ্যানটেনা (antenna) ও একটি power supply কেবিল। এগুলি set-up করে নিলেই মিলবে ইন্টারনেট পরিষেবা। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে স্টারলিঙ্কের পরিষেবা নেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে US মিলিটারি। শোনা যাচ্ছে মাইক্রোস্ফটও চুক্তি করেছে SpaceX এর সাথে।
কবে থেকে ভারতে Starlink পরিষেবা চালু হবে ?
আশা করা যায় ২০২২ সালের মধ্যেই Starlink ভারতে পদার্পন করবে। তবে এখনই স্টারলিঙ্ক – এর Pre Registration শুরু হয়ে গেছে। স্টারলিঙ্কের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের area দিয়ে registration করলে পাওয়া যাবে স্টারলিঙ্কের কিট। যার মূল্য দিতে হবে 99 ডলার।
কিন্তু এখনো এই ইন্টারনেট Beta টেস্টিং পর্যায়ে চলছে। যদি স্পেস-এক্স পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয় তবে এই মূল্য রিফান্ড করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সংস্থার তরফ থেকে।
আরও পড়ুন: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ১৩ টি সহজ উপায়।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক এড়ানোর ১০টি সহজ উপায়, হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ।