Antilia – বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল বিল্ডিং। World 2nd Most Expensive Building

অ্যান্টিলিয়া (Antilia) হলো মুম্বইয়ের ব্যবসায়িক এবং শিল্পপতি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের (Reliance Industries) চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির বিলাসবহুল বাড়ি। অ্যান্টিলিয়া (Antilia) শুধু ভারতে নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে একটি আশ্চর্য্য স্থাপত্য। এটিকে শুধু একটি বাড়ি বললে হয়তো ছোট করা হবে, এটি হলো বিশাল অট্টালিকা বা প্রাসাদ। পৌরাণিক আটলান্টিক দ্বীপে অনুপ্রাণিত হয়ে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের আল্টামাউন্ট রোডে অবস্থিত মুকেশ আম্বানির বাকিংহাম প্যালেসের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল বিল্ডিং বা সম্পত্তি বলে অনুমান করা হয়। হাই-এন্ড এই বিল্ডিংটি তৈরী করার জন্য আনুমানিক $2 বিলিয়ন ব্যয় হয়েছে যা ভারতীয়র মুদ্রায় আনুমানিক ১২ হাজার কোটি টাকা।


Antilia - 2nd Most Expensive Building

    অ্যান্টিলিয়ার ঠিকানা 

    প্রায় 400,000 বর্গফুট ভবনটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ঠিকানা South দক্ষিণ মুম্বাইয়ের অল্টামাউন্ট রোডে। সম্পত্তির প্রবণতা অনুসারে, আল্টামাউন্ট রোডে যে কোনও রিয়েল এস্টেটের প্রতি বর্গফুট জমির দাম ৮০,০০০ থেকে ৮৫,০০০ টাকার মধ্যে রয়েছে।

    অ্যান্টিলিয়ার ডিজাইন 

    অ্যান্টিলিয়ার স্থাপত্য নকশাটি পদ্ম এবং সূর্যের লাইন বরাবর সাজানো হয়েছে। মুকেশ আম্বানির অ্যান্টিলিয়া শিকাগো ভিত্তিক স্থপতি পার্কিনস ও উইল ডিজাইন করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ভিত্তিক নির্মাণ সংস্থা লেইটন হোল্ডিংস এর নির্মাণকাজের দায়িত্ব নিলেন। এই বাড়িটি ২৭ তলাবিশিষ্ট হলেও এর উচ্চতা ৬০ তলার সমান। প্রতিটি তলার উচ্চতা দ্বিতল বিল্ডিংয়ের সমান উচ্চতা। শুধু তাই নয় অ্যান্টিলিয়ার বিল্ডিং ডিজাইন এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে রিখটার স্কেলে ৮ এর একটি ভূমিকম্পে বিল্ডিং এর কোনো ক্ষতি হতে না পারে।

    আরো পড়ুন:  বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ন প্রথম ১০ দেশ

    আরও পড়ুন: Happy Father’s Day 2021

    অ্যান্টিলিয়ার সুরক্ষা ব্যবস্থা 

    অ্যান্টিলিয়ার আতিসহ্যের মধ্যে কিন্তু এর সুরক্ষাব্যবস্থায় কোনো ছেদ পড়েনি। অসংখ্য security সিস্টেম দিয়ে এই বাড়িকে মুড়ে ফেলা হয়েছে।  এই বাড়ির প্রধান প্রবেশ দ্বার বা Main Gate টি সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটার চালিত। এই বাড়ির প্রত্যেকটি গাড়ির ডেটা, এই গেটের মধ্যে সেভ করা রয়েছে। তাই পরিচিত গাড়ি গেটের কাছে এলেই, আপনা হতেই গেটটি খুলে যায়। এছাড়াও বিভিন্য জায়গায় CCTV লাগানো আছে চারপাশের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য। এলাকাটি একটি High Security Zone হিসাবে মান্যতা পায়।

    অ্যান্টিলিয়াতে চাকরি করার জন্য যোগ্যতা 

    এখানে কর্মচারী হিসাবে নিয়োগপত্র পাওয়ার জন্য রীতিমতো qualified হতে হয়। জেনারেল ম্যাথ, জেনারেল ইংলিশ, GK ইত্যাদি চর্চা করতে হয়। রীতিমতো লিখিত এবং তথা মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলে, তবেই এখানে কাজ করবার নিয়োগপত্র পাওয়া যায়। 

    বেকারত্বের এই যুগে আপনি যদি স্টাফ সিলেকশন কমিশনের জন্য প্রস্তুতি নেন, তাহলে জানবেন একই সঙ্গে আপনার অ্যান্টিলিয়ায় কর্মচারী নিয়োগের পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে যাচ্ছে। 

    এই চাকরির বিনিময়ে আপনি যে মাইনেটি পাবেন তা, কেন্দ্র সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারীর মাইনের প্রায় সমতুল্য। অ্যান্টিলিয়ার প্রত্যেকটি কর্মচারীর বেতন প্রায় ২ লক্ষ টাকা।  

    শুধু তাই নয়, সঙ্গে রয়েছে PF, মেডিক্যাল, বোনাস, ইনশিওরেন্স ইত্যাদি সবরকমের সুযোগসুবিধা। এরই সঙ্গে কর্মচারীদের পরিবারের যেকোনো একটি সন্তানকে আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করানোর যাবতীয় খরচ, আম্বানি পরিবারের পক্ষ থেকেই বহন করা হয়।  

    কর্মচারীদের, খরচ ছাড়াও শুধুমাত্র দেখাশোনা করবার জন্যই প্রতিমাসে অ্যান্টিলিয়ার জন্য খরচ হয় ১৫ লক্ষ টাকা।

    আরো পড়ুন:  হার্ট অ্যাটাক এড়ানোর ১০টি সহজ উপায়। হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ এবং প্রতিকার

    আরও পড়ুনবিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ন প্রথম ১০ দেশ

    অ্যান্টিলিয়ার অন্দরমহল 

    এই বিশাল আকাশ চুম্বি অট্টালিকার ভিতরের অন্দর সজ্জা দেখলে আপনি শুধু অবাকই  হবেন এমন  নয়, সেখানকার পরিষেবার কথা জানলে আপনি তাজ্জব হয়ে যাবেন। যেমনঃ 

    ভিতরের সজ্জা 

    • অ্যান্টিলিয়ার স্থাপত্য নকশাটি পদ্ম এবং সূর্যের লাইন বরাবর সাজানো হয়েছে। বিল্ডিংয়ের শীর্ষ ছয়টি  তল বেসরকারী আবাসিক এলাকা হিসাবে আলাদা করা হয়েছে। এখানে আবাসিকরা থাকে।

    • মুকেশ আম্বানির বাড়িতে একটি বিশালাকার মন্দির আছে।


    • বাড়ির ভিতরে ৫০টি আসন বিশিষ্ট একটি Theater Hall আছে। এখানে প্রয়োজনে সপরিবারে বসে সিনেমা দেখেন।


    • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবার জন্য বিশিষ্ট  doctor যুক্ত ২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা Health center  আছে।   

    বিশাল গ্যারেজ 

    মুকেশ আম্বানির তার কাজের জন্য গতির বিশাল প্রয়োজন। তখন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে অ্যান্টিলিয়ায় তার পাঁচ কোটির মেবাচ (Mercedes-Maybach), BMW সহ বিভিন্ন দেশের সব দামী দামী গাড়ি এখানে রয়েছে। কমবেশি ১৬৮ গাড়ি থাকার জন্য একটি বিশালাকার গ্যারেজ আছে। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের বিল্ডিংয়ের সপ্তম তলায় একটি ডেডিকেটেড গাড়ি পরিষেবা স্টেশন রয়েছে।

    আরও পড়ুন: জুন মাসকে কেন গর্বের মাস বলা হয়

    স্নোফল রুমের ব্যবস্থা 

    দুরন্ত মুম্বই গ্রীষ্মে বেশ উষ্ণ হয়ে ওঠে। তবে মুকেশ আম্বানি এবং তার পরিবারের জন্য তাদের একটি বরফের ঘর রয়েছে। এখানে মেশিনের দ্বারা artificial স্নোফল (Snow Fall) তৈরি করা হয় এবং এর দেওয়াল গুলি বিশেষ এক পক্রিয়ায় তৈরি যাতে বাইরের গরম বা উত্তাপ ভিতরে কোনো ভাবেই ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে। 

    আরো পড়ুন:  Motivational Story: স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলার দুটি ঘটনা যা বদলে দেবে আপনার চিন্তাধারা

    অ্যান্টিলিয়ার বাহিরমহল 

    এই বিল্ডিং এ হেলিকপ্টারে ওঠা নাম ৩টি হেলিপ্যাড আছে।  যার সাহায্যে পরিবারের লোকজন খুব সহজে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে  যেতে পারেন। শুধু তাই নয় এগুলি সব এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল দ্বারা পরিচালিত। 

    এই আকাশ চুম্বী অট্টালিকাতে মোট ২৭টি তলা (Floor) আছে। যার জন্য এখানে ৯টি হাই স্পিড এলিভেটর (Elevator) আছে যা বিভিন্ন্য তলার সাথে সরাসরি যুক্ত।

    এখানে সুন্দর একটি টেরেস (Terrace) গার্ডেন আছে যা অতন্ত্য মনোরম।

    এছাড়াও এখানে সুইমিং পুল, স্পা (SPA), Gym সবই বিদ্যমান। 

    এখানে খেলা ধুলার জন্য একটি টেনিস কোর্টও রয়েছে।

    আরও পড়ুন: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ১৩ টি সহজ উপায়

    অ্যান্টিলিয়া নিয়ে বিতর্ক

    অ্যান্টিলিয়ার বাহিরমহল এবং অন্দরমহলের ঐশ্বর্যও কিন্তু কিছু বিতর্ক্যকে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেনি। ২০১১ সালে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান, বিধানসভায় বলেছিলেন, মুকেশ আম্বানির অ্যান্টিলিয়ার জন্য প্রতি মাসে ৫.৬৫ লক্ষ লিটার জলের সাপ্লাই দেওয়া হয় অর্থাৎ এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন অ্যান্টিলিয়ার বাসিন্দাদের জন্য সেইসময় প্রায় ১৮,২৩০ লিটার জল খরচ হত। অর্থাৎ সেই সময়কার হিসাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র অ্যান্টিলিয়াতেই ৬০০ জন মানুষের ব্যবহার্য জল খরচ হত। 

    ভারতের ক্রমবর্ধমান জলসংকটের সমস্যায় দশ বছর পূর্বের এই হিসাব, নতুন করে কোনো চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে কি না, সে কথা পরিবেশবিদরা আরও ভালোভাবে বলতে পারবেন। 

    অ্যান্টিলিয়ার বাস্তুশাস্ত্র নিয়েও কিন্তু আলোচনার ঝর বয়ে গিয়েছে এক সময়। জি কিউ-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ২০১০ সালেই অ্যান্টিলিয়া তৈরি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তথাকথিত ‘বাস্তুদোষ’-এর জন্য আম্বানি পরিবার, এই বাসভবনে আসতে পারেননি। সেই দোষ কাটাতেই ২০১১-তে ১০ দিনব্যাপী পূজার্চনা এবং গ্রহশান্তি যজ্ঞ চলেছিল। তারপরই আম্বানি পরিবারের গৃহপ্রবেশ ঘটে এবং বাকিটা ইতিহাস।

    আরও পড়ুন: যোগের [YOGA] ২০টি উপকারিতা। ওজন কমাতে যোগার উপযোগিতা

    Share It!

    Leave a Comment