আপনারা সবাই নিশ্চয়ই বাংলায় অনেক সাফল্যের গল্প পড়েছেন, যা থেকে আপনি কিছুটা অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। আমরা আপনার জন্য এখানে সফল ব্যক্তিদের Motivational story বা সাফল্যের গল্প নিয়ে এসেছি যা অবশ্যই আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেবে।
স্বামী বিবেকানন্দ হলেন ঊনবিংশ শতকের একজন ভারতীয় সন্ন্যাসী এবং দার্শনিক। তার আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ডাকনাম বিলে। তার মহান অবদানের কথা তো আমরা সকলেই জানি, আজ আমরা এই পোস্টটিতে বিলের ছেলেবেলার দুটি মজার গল্পের ব্যাপারে পড়ব।
Table of Contents
প্রথম অনুপ্রাণিত ঘটনা (1st Motivational Story)
ছোটবেলা থেকে নরেন ছিল শিবের ভক্ত, তিনি শিব ঠাকুরের পুজো করতেন এবং অহরহ শিবের সামনে বসে ধ্যান করতে ভালোবাসতেন। শুধু তাই নয় মাঝে মধ্যে সে তার বন্ধুদের সাথেও ধ্যান ধ্যান খেলতেন।
সেইমতোই একদিন বিলে ও তার বন্ধুরা বসে ধ্যান ধ্যান খেলছিল। হঠাৎ ই খেলার সময় একটি সাপ এসে হাজির হয় তাদের সামনে। সাপের ফোঁস শুনে তার বন্ধুরা চোখ খোলে এবং প্রকাশ্য দিবালোকে সাপ দেখে যারপরনাই ভয় পেয়ে যায়। একমুহুর্ত অপেক্ষা না করে তারা আসন ছেড়ে উঠে পালিয়ে যায়। দরজার বাইরে থেকে তারা নরেনকেও ডাকাডাকি করতে থাকে। কিন্তু ধ্যানমগ্ন নরেনের মধ্যে উঠে আসার কোনোও প্রবণতা না দেখতে পেয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর সাপটিও নরেনকে কিছু না করে তার পাশ কাটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে নরেন ধ্যানভঙ্গ হলে নরেন বলেছিল যে সে তার বন্ধুদের ডাক শুনতেই পায়নি। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার মনে হচ্ছিল যে সে যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছে, যেখানে পরিপূর্ণ আনন্দের পরিপ্লাবন।
আরও পড়ুন: Rabindranath Tagore – ২২ শে শ্রাবণ কবির প্রয়াণ দিবস
গল্পের মূলভাব
এই গল্পটি থেকে আমরা একটি শিক্ষা পাই। কোনো কাজে অসফল হওয়া বা পিছু হটে আসার একটি মূল কারণ হল মনোযোগের অভাব আর সম্মুখের বাঁধা। আমারা জীবনে কোনো না কোনো কাজ করতে গিয়ে হয় অসফল হয়েছি নতুবা বাঁধাপ্রাপ্তির ভয়ে এগোতেই পারিনি।
নরেনের ধ্যানযোগের মতো মনোযোগ সহকারে যদি আমরা কাজে নিজেদের নিয়োজিত করি, তবে সাপরুপী কোনো বাঁধাবিপত্তিই আমাদের টলাতে পারবেনা।
আরও পড়ুন: ওজন বাড়ছে? ঘরে বসে মেয়েদের ওজন কমানোর ৬ টি সেরা উপায়
দ্বিতীয় অনুপ্রাণিত ঘটনা (2nd Motivational Story)
ছোটোবেলায় নরেন এবং তার সমস্ত বন্ধুরা একটি বাগানে খেলতে যেত। নরেন ছিল সমস্ত ছেলেদের মধ্যে সব থেকে বুদ্ধিমান, তার সমস্ত বন্ধুরা তাকে নেতা বলে মনে করত। তারা ঐ বাগানের গাছের উঁচু-নীচু ডালে লাফালাফি করে খেলত। তাদের অমন লম্ফঝম্ফ দেখে স্বভাবতই বাগানের মালিক চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি আশঙ্কা করতেন যদি কেউ গাছ থেকে পড়ে যায় তাহলে তাদের হাত-পা ভাঙার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। এই জন্য সেই বাগানের মালিক নরেনদের সেখান থেকে চলে যেতে বলে। সেই মুহূর্তে তারা সেখান থেকে চলে গেলেও পরের দিন তারা ফের সেই বাগানে এসে খেলত শুরু করে।
সোজাভাবে কথা না শোনায় মালিক এবার একটি ফন্দি আঁটেন। তিনি বাগানে গিয়ে নরেন ও তার সঙ্গীদের জড়ো করে বলেন যে, এই বাগানে একটি ভয়ঙ্কর দৈত্য বাস করে। যদি তারা এই গাছে লাফালাফি করে তবে সেই দৈত্য রেগে গিয়ে তাদেরকে ভীষণ ভয় দেখাবে। তার কথা শুনে সমস্ত বালক ভয় পেয়ে যায় এবং সেখান থেকে চম্পট দেয়। কিন্তু নরেন ছিল সাহসী এবং কৌতুহলী। সে ভয় তো পায়ইনি বরং দৈত্যের বিস্তার বিবরণী জানতে সে মালিককে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে।
মালিক বলতে শুরু করেন যে, দৈত্য হয় তাল গাছের মতন লম্বা এবং ভীষণ ভয়ানক। বলাই বাহুল্য, এই সব শুনে নরেনের মনে আরও কৌতুহলের উদ্রেক হয়। তবে মালিক তাকে ঠেলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়ি গিয়েও তার কৌতুহলের নিরসন ঘটেনি। বরং সে ভাবতে থাকে একবার দৈত্য দেখলে কেমন হয়? যেমন কথা তেমনি কাজ, দৈত্য দেখার তাগিদে সে একা রাত্রিবেলায় চুপ করে সেই বাগানে গিয়ে গাছে উঠে বসে পড়ে। কিন্তু ভোর হলে গেলেও কোনো দৈত্যের দেখা পেলনা।
আরও পড়ুন: নরেনের এই গল্প আমাদের কঠিন মানসিকতার পরিচয় শেখায়
অন্যদিক সকাল হতেই নরেনের বাড়িতে হইচই শুরু হলে যায়। বাড়ির সবথেকে দুরন্ত ছেলেটি যে বেপাত্তা!তাকে খুঁজতে খুঁজতে সকলে সেই বাগানে উপস্থিত হয়, বাগান মালিকও সেখানে ছুটে আসেন। তারপর সকলে মিলে নরেন কে জিজ্ঞাসা করে যে রাতে কেন সে বাগানে এসেছিল, তখন নরেন বলেন যে দৈত্য দেখার জন্য সে বাগানে অপেক্ষা করছিল, অথচ কাউকেই সে দেখতে পায়নি। ফলতঃ খেলার আর বাঁধা রইল না এই বাগানে। তার কথা শুনে বিস্ময়ে হতবুদ্ধ হয়ে যান উপস্থিত সকলে।
আরও পড়ুন: 2021 টাকা জমানোর সবচেয়ে ভালো উপায়
গল্পের মূলভাব
এই গল্পটি থেকে আমরা একটি শিক্ষা পাই। লোকমুখে শোনা কোনো কথা বিশ্বাস করা কখনোই উচিৎ নয়। এবং যখন আমাদের মতামতের উপর আর পাঁচজনের ভরসা করার সম্ভাবনা থাকে তখন নিজে যাচাই না করে কখোনোই কোনোও সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ নয়।
নরেন্দ্রনাথের কিশোরবয়সের বুদ্ধিমত্তা ও আমাদের পূর্ণবয়স্ক মানসিকতার থেকে অনেকাংশে উন্নত ছিল। সেইজন্যই তো তিনি যুবনেতা।
আরও পড়ুন: এই যোগা করলে দীর্ঘদিন আপনার যৌবন অটুট থাকবে, সঙ্গে স্মৃতি শক্তিও