শরৎ এর মেঘ আর কাশফুলের দোলা জানান দিচ্ছে সময় আগত! আর মোটে মেরেকেটে কয়েকদিন বাকি, তারপরেই বাঙালির সবথেকে প্রতীক্ষিত উৎসবের সূচনা, দূর্গাপূজো। আপামর বাঙালির কাছে এই দূর্গা পুজো সর্ব শ্রেষ্ঠ পুজো। কেবল বঙ্গবাসীই নয় গোটা দেশের বেশ কিছু রাজ্যে এমনকি সুদূর বিদেশ বিভুঁইয়ের প্রবাসীরাও মেতে ওঠে এই পাঁচটি দিন।
গত বছর করোনার প্রকোপের জেরে তালা পড়েছিল চিরাচরিত বনেদিয়ানায়। তবে বর্তমানে করোনার রেশে লাগাম, ফলতঃ দুগ্গা দুগ্গা করে ঢাকে কাঠি পড়ার আর দূর্গানামে অমৃতলাভের অপেক্ষায় আমরা সবাই।
নতুন নতুন জামা আর আমিনিয়ার বিরিয়ানির ফাঁকে চলুন আজ জেনে নিই দূর্গাপূজোর এবছরের নির্ঘন্ট আর কিছু বিশেষ কথা।
Table of Contents
দেবীর আগমন
এই বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।
দেবীর গমন
উমা কৈলাসে ফিরবেন নৌকায় যার জন্য জল বৃদ্ধি বা বন্যা হবার সম্ভাবনা।
মহালয়ার নির্ঘন্ট
মহালয়া ২৫ সেপ্টেম্বর | ৮ আশ্বিন পূর্বদিন রাত্রি ২:৫৫ মিনিট থেকে পরের দিন, রাত্রি ৩:২৪ মিনিট পর্যন্ত অমাবস্যা।
মহালয়া মানেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে আশ্বিনের শারদপ্রাতে আর পূজোর দিন গোনা শুরু। ভোর বেলা ৪টা সময় রেডিওতে এই মহালয়া শোনার জন্য সকলেই ব্যাকুল হয়ে থাকি। কিন্তু এর আসল তাৎপর্য হয়ত অনেকেরই অজানা।
সনাতন ধর্ম মতে এই কৃষ্ণপক্ষকালে যমলোক বা পিতৃলোক থেকে পূর্বপুরুষদের প্রেত মর্ত্যলোকে বসবাস করে নিজের পরিজনদের সঙ্গে। এর পর তাঁরা আবার পিতৃলোকে ফিরে যান। এই সময়ে প্রয়াত পরিজনদের আত্মার যে সমাবেশ ঘটে তাকে বলা হয় মহান লয়। সেই শব্দ থেকেই এসেছে ‘মহালয়’ শব্দটি।
ত্রেতা যুগে শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা জয় করে সীতা উদ্ধারের আগে অকালবোধন করে দেবীর আরাধনা করেছিলেন এই শরৎকালে। রামায়ণ অনুযায়ী এই মহালয়ার দিনেই নাকি স্বর্গগত পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পন করেছিলেন রামচন্দ্র।
মহাভারত অনুযায়ী এই দিনে কর্ণ পিতৃমাতৃ পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জলঅন্ন দান করেছিলেন।
মহালয়ার অনুষ্ঠান
তর্পন: আজও মহালয়ার দিন সকলে নিজেদের পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে তর্পন করেন।
সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বপুরুষ বা স্বর্গগত মাতা-পিতার উদ্দেশ্যে অঞ্জলী প্রদান করতে হয়, যাকে তর্পন করা বলে।
আরও পড়ুন: গনেশ চতুর্থী ২০২২: জানুন তিথি, পূজোর বিধি, নিয়ম। গনেশ চতুর্থীর ১২ টি তাৎপর্য
মহাষষ্ঠীর নির্ঘন্ট
মহাষষ্ঠী ১ অক্টোবর | ১৪ আশ্বিন। রাত্রি ৮ টা ৩৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত থাকবে।
মহাষষ্ঠীর অনুষ্ঠান
শাস্ত্রমতে মহাষষ্ঠীতেই কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি অর্থাৎ মর্ত্যে ফেরেন উমা। তাই এদিনই দেবীর বোধন হয়।
অধিবাস, আবাহন, আমন্ত্রণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মহাষষ্ঠীর মহাআচার সম্পন্ন হয় এভাবেই।
আরও পড়ুন: Starlink কি, Internet Speed, ব্যবহার, সুবিধা
মহাসপ্তমীর নির্ঘন্ট
মহাসপ্তমী ২ অক্টোবর | ১৫ আশ্বিন রাত্রি ৬ টা ২১ মিনিট ৪২ সেকেন্ড পর্যন্ত।
মহাসপ্তমীর অনুষ্ঠান
মহাসপ্তমীতেই দেবীর চক্ষুদান সম্পন্ন হয়। গঙ্গায় গিয়ে নবপত্রিকা অর্থাৎ কলাবউ স্নান করানো হয়। দেবীর আবাহন ও পূজার মাধ্যমে মহাসপ্তমীর মহাআচার সম্পন্ন হয়।
মহাষ্টমীর নির্ঘন্ট
মহাঅষ্টমী ৩ অক্টোবর| ১৬ আশ্বিন দিন ৩ টা ৫৯ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্ত থাকবে।
Watch Web-story – Click here
মহাষ্টমীর অনুষ্ঠান
সন্ধ্যিপূজো:
মহাষ্টমী শেষ হওয়ার আগের ২৪ মিনিট ও মহানবমী তিথি শুরু হওয়ার পর ২৪ মিনিট ধরে এদিনই হয় সন্ধ্যিপূজো। পূরাণমতে, এই সন্ধ্যিক্ষণেই দেবীদূর্গা বধ করেছিলেন মহিষাসুরকে। আর এই মাহেন্দ্রক্ষণই হল পাপপূন্যের মিলনস্থল।
সময়: সন্ধিপূজা। দিন ৩ টা ৩৫ মিনিট থেকে ঐ দিন ৪ টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত।
পাঁচদিনের দূর্গাপূজার মধ্যে এই মহাষ্টমীতে সবচেয়ে বেশী একাত্ম হতে পারি মায়ের সাথে। পাটভাঙা শাড়ি আর ভেজা খোলা চুল অন্যদিকে ছেলেদের পাঞ্জাবি-জিন্সের নতুন মোড়কে সেজে উপোসী পেটে অঞ্জলি দেওয়া হয় দেবীকে। এদিন কুমারীপূজোও হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্ব মহাসাগর দিবস। World Ocean Day 2021 in Bengali
মহানবমীর নির্ঘন্ট
৪ অক্টোবর | ১৭ আশ্বিন দিন ৩ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
মহানবমীর অনুষ্ঠান
চন্দ্রের নবমী তিথিতে মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা শুরু হয়। মহানবমীর আচার খুব বেশী না হলেও এদিনে সন্ধারতি হয় খুব ধুমধাম করে।
আরও পড়ুন: Father’s Day 2021 in Bengali
বিজয়া দশমীর নির্ঘন্ট
দশমী ৫ অক্টোবর | ১৮ আশ্বিন।
বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠান
এই দিনই মাকে বিদায় জানানোর পালা। চারদিকে বিসর্জনের সুর বেজে ওঠে, তাই সকল মানুষের মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। মহাদশমীর দিনেই দেবীর বরণ হয় ও মা ফিরে যান কৈলাশে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে চলে বিবাহিত মেয়েদের এদিন সিঁদুর খেলা।
ছোটোরা বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেন।
এছাড়াও পরিবারে এবং প্রতিবেশীর মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে ভালোবাসা জানানো হয়।
এক নজরে দুর্গাপূজার সময়সূচি
আরও পড়ুন: এই যোগা করলে দীর্ঘদিন আপনার যৌবন অটুট থাকবে, সঙ্গে স্মৃতি শক্তিও