যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, সেইসব মানুষ অনেক কিছু মনে রাখতে পারেনা। সে ছোট ছোট কাজ ভুলে যায়। এ কারণে তাদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। বাড়ী থেকে অফিসে অনেক কথা শুনতে হয় তাকে এই ভুলে যাবার জন্য। তাই স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করতে চাইলে প্রয়োজনীয় কিছু খাবার খান। এগুলো খেলে আপনার মস্তিষ্ক প্রখর হওয়ার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিও বাড়বে। সাধারণত বয়সের সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়, তবে কিছু কিছু সময় শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও মনে রাখতে সমস্যা হচ্ছে। আসলে অনেক সময় দেখা গেছে পুষ্টির অভাবে বা কোনো আঘাত বা রোগের কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে। যাইহোক, আপনার আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই কারণ স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ঘরোয়া এই প্রতিকারগুলি আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
তাই আপনার বা আপনার কাছের কারো স্মৃতিশক্তি দুর্বল হলে সেই স্মৃতিশক্তিকে বৃদ্ধির জন্য চাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য। এছাড়াও আপনার খাদ্যতালিকায় স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ব্যবস্থার সাহায্যে এই সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন।
তাহলে আসুন জেনে নেই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ঘরোয়া উপায়গুলো সম্পর্কে।
Table of Contents
মাছের তেল
মাছের তেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ইকোসাপেন্টাইনয়িক অ্যাসিড (ইপিএ) এবং ডোকোসাহেক্সাইনয়িক অ্যাসিড (ডিএইচএ) সমৃদ্ধ। এই চর্বি স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে মাছের তেলের পরিপূরক স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে।
আরো পড়ুন: চুলের অকালপক্বতা থেকে বাঁচতে এই গুলো মেনে চলুন
আপেল খাওয়া
আপেলে রয়েছে কোয়ারসেটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এই কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। পারকিনসন এবং আলঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষমতা আপেলের রয়েছে। তাই আপনার খাদ্য তালিকাতে এই আপেল রাখা অতন্ত্য জরুরি।
আরো পড়ুন: হিট স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ কী। জানুন এর থেকে নিজেকে বাঁচানোর ১০টি উপায়
ব্রাহ্মী শাক
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা উন্নত করতে ব্রাহ্মী শাক অন্যতম সেরা ভেষজ। এটিতে অনেক জৈব সক্রিয় পদার্থ রয়েছে যেমন ব্যাকোসাইড এবং সিটাগমাস্টেরল যা শুধুমাত্র স্মৃতিশক্তি উন্নত করে না বরং মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও উন্নত করে।
আরো পড়ুন: এই যোগা করলে দীর্ঘদিন আপনার যৌবন অটুট থাকবে, সঙ্গে স্মৃতি শক্তিও
ব্রকলি খান
সমস্ত সবুজ শাকসবজি শরীরের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু ব্রকলি ভিটামিন K সহ অনেক পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি সেবনে ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী থাকে এবং মনও দ্রুত চলে।
আরো পড়ুন: ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট।
শঙ্খপুষ্পী স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করে
এটি স্ট্রেস, অনিদ্রা এবং উদ্বেগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। প্রাণীদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে শঙ্খপুষ্পী মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে সংযোগ বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে উন্নত করে। এছাড়াও এতে রয়েছে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ যা মস্তিষ্ককের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবস্থা এবং বয়সের কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
মেডিটেশন হল স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ অন্য একটি উপায়
ধ্যান বা Meditation মানসিক চাপ কমাতে এবং একাগ্রতা বাড়াতে খুব সাহায্য করে। একবার 293 জন মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জিনিস মনে রাখার ক্ষমতা উন্নত করার জন্য মাইন্ডফুলনেস (Mindfulness) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রশিক্ষিত ছাত্রদের স্মৃতিশক্তি প্রশিক্ষিত নয় এমন ছাত্রদের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে।
আরো পড়ুন: ব্ল্যাক ফ্রাইডে আসলে কি ? জানুন Black Friday এর উৎস কোন দেশ, তাৎপর্য, নামের ইতিহাস
নিয়মিত ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যায়াম সব বয়সের মানুষের স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। একই সময়ে, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যায়াম নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রোটিনের নিঃসরণ বাড়াতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিকারী নিউরনের বিকাশকেও উন্নত করতে পারে। যার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুন: জানুন PPF Account এর ১১ রকমের সুবিধা, অসুবিধা
হলুদ সেবন করা
আমরা আমাদের প্রায় সব রান্নাতেই হলুদ বেবহার করে থাকি। হলুদে কারকিউমিন নামক উপাদান থাকে যা শরীরে প্রদাহ বিরোধী প্রভাব দেয়। এটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাবও রয়েছে। বেশ কিছু প্রাণীর গবেষণায় দেখা গেছে যে কার্কিউমিন মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: খুশকির হাত থেকে রেহাই পেতে এই কাজ গুলো অবশ্যই করুন
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ঘুম হল ঘরোয়া উপায়
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যও ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন স্মৃতিশক্তিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। 155 কলেজ ছাত্রদের উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ছাত্ররা অল্প সময়ের মধ্যে (এক সপ্তাহ বা এক মাস) 6 বা তার বেশি পানীয় গ্রহণ করেছে তাদের তুলনায় যারা এটি পান করেনি তাদের স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এই সব ঘরোয়া প্রতিকারের সাহায্যে আপনি মনকে শাণিত করতে পারেন।