এই যোগা করলে দীর্ঘদিন আপনার যৌবন অটুট থাকবে, সঙ্গে স্মৃতি শক্তিও

শরীরকে সুস্থ, রোগমুক্ত ও তরতাজা করতে যোগাসনের ভূমিকা অপরিসীম। শরীরকে ফিট এবং প্রাণোচ্ছল রাখতে নিয়মিত যোগা করা খুব দরকার। আমরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ সময় থেকে প্রতিদিন করে যদি ১০ কিংবা ১৫ মিনিট বাঁচিয়ে একটি সু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি সেটি আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে আরো সুখময় করে তুলবে। নিয়মিত যোগা বা আসন করলে অনেক রোগ থেকে খুব সহজেই রক্ষা পাওয়া যায় এছাড়াও শরীরকে সুস্থ সবল করতে সাহায্য করে। অনিদ্রা কাটে, ক্ষুধা বাড়ে, শরীর হালকা হয়, কর্মক্ষমতা বাড়ে। সবচেয়ে বড়কথা শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেক গুন বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ কিংবা সুগারের মত নানা রোগকে এড়ানো যায়। ডাক্তাররা পরামর্শ দেন বিভিন্ন যোগাসন করার।

সহজে করা যায় এমন তিনটি যোগা বা আসন নিয়ে আমরা কথা বলব যেগুলির মানুষের শরীরে অনেক উপকার করে।

ভুজঙ্গাসন 

ভুজঙ্গাসন করার পদ্ধতি:

১. দুটো পা একসঙ্গে করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। পায়ের গোড়ালি উপর দিকে থাকবে।

২. দুদিকে দুটো হাত টান টান করে বুকের দুপাশে রাখুন। কনুই এর কাছে হাত ভাঁজ হবে।

৩. এরপর মাথা, তারপর ঘাড়, তারপর বুক, তারপর পেট ধীরে ধীরে উপরে তুলুন। এতে পায়ের আঙ্গুল থেকে নাভি পর্যন্ত শরীরের অংশ মাটিতে সমানভাবে লেগে থাকবে।

আরো পড়ুন:  [FAST FOOD] জাঙ্ক ফুড শরীরে কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে - জানুন ৯টি সমস্যা

৪. চোখের দৃষ্টিকে ওপরে দিকে করে রাখতে হবে ও ২ কিংবা ৩ সেকেন্ডের মত শ্বাস বন্ধ রাখবেন।যদি শ্বাস বন্ধ রাখতে কষ্ট হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন।

credit: The art of Living

ভুজঙ্গাসন কতবার করতে হবে

ভুজঙ্গাসন পরপর বার করতে হবে।

ভুজঙ্গাসন এর উপকারিতা

১) শিরদাঁড়ার পুরো হাড়ের জড়তা কাটে, নমনীয় হয় এবং বুকে ও পিঠে যাবতীয় সমস্যা দূর হয়।

২) এই আসনে কোমর পাতলা হয় এবং বুক চওড়া হয়। পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে। কোমর সুন্দর হয় ও শরীরের গঠন সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

৩) যুবতীরা এই আসন করলে তাদের বক্ষস্থল সমুন্নত ও সডৌল করে তুলতে পারেন এবং যুবকদের স্বপ্নদোষ দূর হয়।

৪) পেট, বুক, হৃদয়, ঘাড়, হাত, পেশি শক্তিশালী ও সবল হয়। টনসিল গ্রন্থিসমূহ পুষ্ট হয়।

৫) বৃক্কের কাজ অধিক শক্তিশালী হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়।

৬) এই আসনে হৃদয় রোগে বিশেষ উপকার হয়। এই আসনের নিয়মিত অভ্যাসে পেটের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পেটে গ্যাস হতে পারে না।

৭) ফুসফুস শক্ত সবল হয়। কাশি, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগের ভয় থাকে না।

৮) মেয়েদের পক্ষেই আসন অত্যন্ত ফলদায়ক। পিরিয়ডের অনিয়মিত, কষ্টদায়ক, গর্ভাশয় ও ভেতরের যৌনাঙ্গের অনেক রোগ দূর হয়।

ভুজঙ্গাসনের কয়েকটি উপদেশ এবং সতর্কতা

  • এই আসনটি স্ত্রী-পুরুষ সবাই করতে পারবেন। এটি খুব উপকারী এবং লাভ দায়ক আসন।
  • যাদের হার্নিয়া আছে তারা এই আসনটি কখনোই করবেন না।
  • গর্ভবতী মহিলাদের এই আসন করা নিষিদ্ধ।
  • যারা ধনুরাসন করতে পারেন না তাদের এই ভুজাঙ্গাসন করলে প্রায় সমান উপকার হয়।
 

পদ্মাসন

পদ্মাসন করার পদ্ধতি:

১. মাটিতে আসন পেতে বসুন। পা সামনে সোজা করে একসঙ্গে ঠেকিয়ে রাখুন।

আরো পড়ুন:  Skin Care: ঘরোয়া উপায়ে ত্বককে করুন স্বাস্থোজ্জ্বল, মসৃণ - রইল ১৩ রকমের ঘরোয়া টিপস

২. ডান পা বাম জঙ্ঘা উপর এবং বাম পা ডান জঙ্ঘা ওপর এমন ভাবে রাখুন, যাতে দুই পায়ের গোড়ালির নাভির দুপাশে পেটের সঙ্গে থেকে থাকে।

৩. কোমর,বুক,ঘাড়, মাথা একেবারে টানটান সোজা করে রাখুন। দু পায়ের হাঁটু যেন মাটি ছেড়ে উপরে না উঠে যায়।

৪. দুই হাতের করতল কোলের মাঝখানে রেখে স্থির হয়ে বসুন অথবা জ্ঞানমুদ্রার মতো করে করতল দুটোকে হাঁটুর উপর রাখুন।

৫. চোখ আলতোভাবে বন্ধ করে রাখুন।

credit: The art of Living

পদ্মাসন কতক্ষন করতে হবে

এই আসন যতক্ষন সময় ধরে বেশী করে করতে পারেন ততোই ভালো। অন্তত ১০ মিনিট অভ্যাস করতেই হবে।

পদ্মাসনের উপকারিতা

১) এটি ধ্যানের আসনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এতে অস্থির মন স্থির হয়। ধ্যানে মনোনিবেশ করতে সুবিধে হয়।

২) জননেন্দ্রিয় সুস্থ সবল থাকে। ব্রহ্মচর্য পালনে সাহায্য হয়। স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৩) পায়ের নানা দোষ দূর হয়।

৪) অনিদ্রা, ক্রোধ, উত্তেজনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৫) এই আসুন নিয়মিত করার ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও জীবন শক্তি বৃদ্ধি পায়। মানুষ দীর্ঘায়ু লাভ করে।

পদ্মাসনের কয়েকটি উপদেশ এবং সতর্কতা

  • এই আসনখানি করার পর পা বদল করে আবার করবেন।
  • শুরুতে এক মিনিট পড়ে পড়ে বাড়াতে বাড়াতে এক ঘন্টা পর্যন্ত করতে পারে।এই আসুন ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই করতে পারেন।

বজ্রাসন

বজ্রাসন করার পদ্ধতি:

১. পা হাঁটু থেকে মুড়ে বসুন, পায়ের পাতা তেরজা করে তারপর পাছা ঠেকিয়ে রাখুন।

২. মেরুদন্ড ও মাথা সোজা টান টান থাকবে।

আরো পড়ুন:  Weight Loss: 40 বছরের পরেও কীভাবে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন

৩. দুই হাতের কনুইয়ের করতাল মাটির দিকে করে দুই হাঁটুর উপর রাখুন।

৪. ঘাড় সোজা এবং দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির হয়ে থাকবে।

৫. শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকবে।

credit: The art of Living

বজ্রাসনের উপকারিতা

১) শরীরে যৌবন দীর্ঘদিন ধরে রাখার জন্য এই যোগা অপরিসীম। নিয়মিত এই ব্যায়াম করে যেতে পারলে বেশি বয়স অব্দিও আপনার যৌবন আপনার শরীরে প্রকাশ পাবে।

২) পেটের ভিতরে থাকা গ্যাস ও ব্যথাটি শান্ত করতে পারে

৩) বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই আসনে বসে মাথা আঁচড়ালে মাথার চুল সাদা হতে পারেনা।

৪) শরীরে সুস্থভাবে রক্ত চলাচল করে, ফলে জন্ডিস রোগ হতে পারে না।

৫) খাবার খাবার পরেই আসুন মিনিট পাঁচেক করলে নাড়ির গতি ঊর্ধ্বগামী হয় এবং দ্রুত খাবার হজম হয়।

বজ্রাসনের কয়েকটি উপদেশ এবং সতর্কতা

  • এই আসুন স্ত্রী পুরুষ উভয়ই সমান ভাবে করতে পারেন। এই আসন দীর্ঘদিন পর্যন্ত খুব সহজেই করা যায়। এটাই একমাত্র আসন যা খাওয়ার পরও করা যায়।
Share It!

Leave a Comment