ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট। Diet Chart for Fatty Liver in Bengali

Share It!

একটি সুস্থ লিভার বা যকৃত মানুষকে বেশিদিন বাঁচতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল যকৃত। এটি প্রাণীদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। মানুষের শরীরে বিপাক এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কাজে যকৃত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যকৃৎ থেকে যে পিত্তরস বের হয় সেটি ফ্যাট জাতীয় খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এখানে ইউরিয়া তৈরি হয় যা অনেক জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট

এছাড়াও যকৃতে ভিটামিন A,D,E,K,B6 এবং B12 জমা হয়। এই জাতীয় ফ্যাটি লিভার লিভারের প্রদাহ, লিভারের সিরোসিস, লিভারের ক্যান্সার, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ফ্যাটি লিভার একটি খুব সাধারণ লিভারের রোগ এবং অনুমান করা হয় যে এটি ৫-৭ শতাংশ ভারতীয়কে প্রভাবিত করে।

ফ্যাটি লিভার কী ?

ফ্যাটি লিভার হলো এক ধরনের যকৃতের অসুখ। মানবদেহে যকৃতের ওজন ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি ফ্যাট দিয়ে পূর্ণ হলে তাকেই ফ্যাটি লিভার বলে। লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে জমে সেটি ফ্যাটি লিভারে পরিণত হয়। 

ফ্যাটি লিভার রোগটি হওয়ার ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায়। শুধুমাত্র এটি বেশি তেলযুক্ত খাবার খাওয়া কিংবা মুখরোচক ফাস্টফুড এর জন্য দায়ী নয়। অতিরিক্ত এলকোহল সেবনের কারণেও যকৃতের কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: 40 বছরের পরেও কীভাবে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ মানে কী ?

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ হল ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে হালকা রূপ। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারের কোষগুলিতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ সাধারণত কোন লক্ষণ বা উপসর্গ সৃষ্টি করে না।

Read More:  রাতে কি ঠিক মতো ঘুম হচ্ছে না? ঘুম বা ক্লান্তি দূর করতে এই কাজগুলো অবশই করুন

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ নির্ণয় করার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা এমআরআই ব্যবহার করা যেতে পারে। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে, লিভারের কোষগুলিতে অতিরিক্ত চর্বি একটি সাদা চেহারা দেয়।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে, জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটিকে নিরাময় করা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ওজন হ্রাস: ওজন হ্রাস লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি অপসারণে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ এর কোন লক্ষণ বা উপসর্গ না থাকলেও, এটি একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে – যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি ফ্যাটি লিভার রোগে পরিণত হতে পারে। যা ফলে লিভারের প্রদাহ, ক্ষতি এবং এমনকি সিরোসিসও হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড 2 মানে কী ?

ফ্যাটি লিভার গ্রেড 2 হল ফ্যাটি লিভারের একটি মধ্যবর্তী রূপ। এটি ফ্যাটি লিভার গ্রেড ১ এর চেয়ে বেশি গুরুতর, তবে ফ্যাটি লিভার গ্রেড ৩ এর চেয়ে কম। ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২-এর ক্ষেত্রে, লিভারের কোষগুলিতে চর্বি জমার পরিমাণ 20-30% এর মধ্যে থাকে।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ সাধারণত কোন লক্ষণ বা উপসর্গ সৃষ্টি করে না। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

  • উপশ্বাস
  • ক্ষুধা হ্রাস
  • বমি বমি ভাব
  • পেটে ব্যথা

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ নির্ণয় করার জন্যও আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা এমআরআই ব্যবহার করা যেতে পারে। এমআরআইতে, লিভারের কোষগুলিতে অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত হতে দেখা যায়।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ সাধারণত জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ওজন হ্রাস: ওজন হ্রাস লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি অপসারণে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ লিভারের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • কিছু ক্ষেত্রে, ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২-এর জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। এই ওষুধগুলি লিভারের প্রদাহ এবং ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি লিভার কেন হয়

ফ্যাটি লিভার হবার অন্যতম কারণগুলি হলো –

১) অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে সাধারণত ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। চর্বিযুক্ত লিভারের রোগ অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে ঘটে এবং যদি কোনও ব্যক্তি অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ্যপান করা চালিয়ে যায় তবে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

Read More:  Heat Stroke: হিট স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ কী। জানুন এর থেকে নিজেকে বাঁচানোর ১০টি উপায়

২) ফাস্টফুড, শর্করা জাতীয় খাদ্য, চর্বি বা তেল জাতীয় খাদ্য, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণেও ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। 

৩) স্থুলতা ফ্যাটি লিভার এর একটা অন্যতম কারণ। একজন ব্যক্তির যদি অতিরিক্ত ওজন হয় এবং শরীরে BMI বেশি হলে তাহলে তার ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়। 

৪) যাদের ডায়াবেটিস নেই কিন্তু পরবর্তীকালে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদেরও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। 

৫) যেসব মানুষের শরীরে ট্রাই গ্লিসারাইড নামক তরলটি বেশি থাকে তাদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আরও পড়ুন: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ১৩ টি সহজ উপায়

ফ্যাটি লিভার হবার লক্ষণ (ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়)

ফ্যাটি লিভার হবার  আমাদের চোখে পরে, শুধু একটু সতর্কও থাকলেই আমরা সহজেই এটি বুঝতে পারবো।

১) আপনার শরীরে খিদে কমে যাওয়া

২) শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া

৩) অবসাদ, দুর্বলতা, পেটে ব্যথা

৪) চোখ ও চামড়ার রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া

৫) পেটে জল জমা আর পা ফুলে যাওয়া

ফ্যাটি লিভার হলে কী খাওয়া উচিত

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ফ্যাট লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। এর জন্য, আপনি ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারেন। 

১) ফল এবং শাকসবজি

ফ্যাটি লিভারের জন্য ফল এবং শাকসবজি খুবই উপকারী। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকে যা লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত পাঁচটিটি করে ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

২) ওমেগা-৩ তেলযুক্ত মাছ

ওমেগা-৩ তেল লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত তিনবার ওমেগা-৩ তেলযুক্ত মাছ, যেমন ইলিশ, রূপচাঁদা, টুনা, স্যামন, সার্ডিন ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৩) চর্বিহীন প্রোটিন

চর্বিহীন প্রোটিন, যেমন মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, এবং ডাল, লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম চর্বিহীন প্রোটিন খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৪) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ফল, শাকসবজি, এবং পুরো শস্য, লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি অপসারণে সাহায্য করে।

৫) সোয়াবিন

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে এর থেকে তৈরি টোফু লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

Read More:  মেয়েদের গ্রীন টি [Green Tea] এর উপকারিতা। অপকারিতা

৬) ওটস

যা সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ফ্যাট জমতে দেয় না এবং ওজন ও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ওটস নিয়মিত খাবার চেষ্টা করুন। 

৭) রসুন

যা শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে আর খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

৮) গ্ৰিন টি

গ্ৰিন টি ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করে।

ফ্যাটি লিভারের ডায়েট চার্ট

Fatty Liver Diet Chart

আরও পড়ুন: জাঙ্ক ফুড শরীরে কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে – জানুন ৯টি সমস্যা

ফ্যাটি লিভার হলে কী খাওয়া উচিত নয়

১) অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়

অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি করতে পারে। তাই ফ্যাটি লিভার হলে অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলুন।

২) চর্বিযুক্ত খাবার

অতিরিক্ত চর্বি লিভারে জমা হতে পারে। তাই ফ্যাটি লিভার হলে চর্বিযুক্ত খাবার, যেমন লাল মাংস, ফাস্ট ফুড, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৩) চিনিযুক্ত খাবার

চিনি লিভারের প্রদাহ বাড়াতে পারে। তাই ফ্যাটি লিভার হলে চিনিযুক্ত খাবার, যেমন মিষ্টি, কোমল পানীয়, এবং ফলের রস এড়িয়ে চলুন।

ফ্যাটি লিভারের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোও গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: PPF –  জানুন PPF Account এর ১১ রকমের সুবিধা, অসুবিধা

FAQ:
একটি সুস্থ যকৃতের ওজন কত হয় ?

মানুষের শরীরে একটি সুস্থ যকৃতের ওজন দেহের মোট ওজনের প্রায় ৩ থেকে ৫ % (শতাংশ)

যকৃতের রং কি ?

যকৃতের রং লাল।

যকৃত কয়টি অংশে বিভক্ত ?

মানবদেহে যকৃত দুটি অংশে বিভক্ত একটি হলো ডান দিকের অংশ এবং আরেকটি বাঁ দিকের অংশ।

ব্যায়াম করলে কি ফ্যাটি লিভার কমতে পারে ?

সকালে নিয়মিত হাঁটা এবং কিছু যোগাসন করলে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

Leave a Comment