যেকোনো শুভকাজের আগে আমরা সিদ্ধিদাতা গনেশ বন্দনা করে থাকি। প্রতিবছর মহা সমারোহে গনেশ চতুর্থী পালিত হয় গোটা দেশে। লোকমতে বলে, কাজের শুরুতে গনেশ বন্দনা করলে সুষ্ঠুভাবে কার্য সম্পন্ন হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, গনেশ পূজো করলে জীবনে সুখ আসে, সমৃদ্ধি আসে। লক্ষ্মী-গনেশের একসঙ্গে পূজো করলে অগাধ ধনলাভ হয়। আজকের প্রতিবেদনে আমরা চলতি বছরের গনেশ চতুর্থীর তিথি ও যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব।
Table of Contents
- 1 ২০২৩ সালের গনেশ চতুর্থীর তারিখ, তিথি, সময়
- 2 Ganesh Chaturthi 2023 Start and End Date in English
- 3 গনেশ চতুর্থী কতদিন উদযাপিত হয়
- 4 গনেশ চতুর্থীর তাৎপর্য
- 5 গনেশ পূজোর প্রয়োজনীয় উপকরণ
- 6 গণেশ চতুর্থী 2023 পূজা বিধান (Ganesh Chaturthi 2023 Puja Vidhi)
- 7 গণেশ চতুর্থী 2023 পূজা মন্ত্র
- 8 গণেশ চতুর্থী 2023: আবাহন এবং প্রাণ প্রতিস্থা আচার
- 9 গণেশ চতুর্থী উত্তরপূজার আচার
- 10 কোন কোন রাজ্যে ধুমধাম করে পালিত হয়
- 11 Related Post
২০২৩ সালের গনেশ চতুর্থীর তারিখ, তিথি, সময়
এইবছর সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে পড়েছে গনেশ চতুর্থী।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে,গনেশ চতুর্দশী ২০২৩ সোমবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, দুপুর ১২:৩৯-এ শুরু হবে এবং ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ৮:৪৩-এ শেষ হবে।
তাছাড়া, আপনি যদি মধ্যাহ্ন গণেশ পূজার মুহুর্তটি দেখেন। এটি সকাল ১১:০১ AM এ শুরু হবে এবং ০১:২৮ PM পর্যন্ত চলবে। এটি ০২ ঘন্টা ২৭ মিনিটের জন্য হবে।
Ganesh Chaturthi 2023 Start and End Date in English
Ganesh Chaturthi 2023 Start Date | Tuesday, September 19, 2023 |
Ganesh Chaturthi 2023 End Date | Thursday, September 28, 2023 |
Ganesh Chaturthi Tithi Starts | September 18, at 12:39 PM |
Ganesh Chaturthi Tithi Ends | September 19, at 1:43 PM |
Ganesh Puja 2023 Muhurat | 11:00 AM to 1:26 PM |
When is Ganesh Visarjan 2023? | Thursday, September 28, 2023 |
Significance | Rebirth of Lord Ganesha |
গনেশ চতুর্থী কতদিন উদযাপিত হয়
দেশের বিভিন্ন জায়গায় গনেশ চতুর্থী পালিত হয় দুই দিন ধরে। কিন্তু মহারাষ্ট্র ও দক্ষিনভারতের বিভিন্ন স্থানে টানা দশ দিন যাবৎ মহাসমারোহে পালিত হয়। গনেশ চতুর্থীর শেষ দিনকে বলা হয় অনন্ত চতুর্দশী। এগারোতম দিনে গনেশ ভাসান সম্পন্ন হয়।
গনেশ চতুর্থীর তাৎপর্য
নিয়ম মেনে গনপতি বাপ্পার পূজো করলে নানাবিধ সুফল মেলে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল।
১. দারিদ্রতা থেকে মুক্তি: দারিদ্রতা আমাদের জীবনের চরমতম অভিশাপ। এর থেকে বাঁচার জন্য গনেশ সাধনা খুবই ফলপ্রদ।
২. ব্যবসায় অগ্রগতি: ব্যবসা সঠিক পথে চালিয়ে লাভের মুখ দেখায় বাপ্পা।
৩. চাকুরীতে উন্নতি: চাকরির বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে রাখেন বাপ্পা।
৪. শ্রীবৃদ্ধি ও অর্থবৃদ্ধি: নিয়ম মেনে গনেশ পূজো করলে জীবনে শ্রীবৃদ্ধি ও অর্থবৃদ্ধি হয়।
৫. রোগমুক্তি: নানা রোগের প্রকোপ থেকে মুক্তি লাভ হয়। যদিও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
৬. দীর্ঘায়ু: মানুষকে সুস্থ রেখে আয়ুকে প্রলম্বিত করে।
৭. বিদ্যায় উন্নতি: ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালাভের জন্য, বিদ্যায় নানা বাঁধা কাটিয়ে সুফল লাভের জন্য।
৮. বিবাহ সমস্যার সমাধান: বিবাহে নানা বাঁধা কাটানোর জন্য। বিবাহিত জীবনে সুখ লাভের জন্য।
৯. মামলা মোকদ্দমা: যদি ন্যায়ের পথে থাকেন, তবে মামলা মোকদ্দমায় জয় অবশ্যই হবে গনপতির আশীর্বাদে।
১০.সুখী পরিবার: গোটা পরিবার যাতে হেসে খেলে সুখে কাটাতে পারে সেইজন্য।
১১. সমস্যামুক্তি: যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য।
১২. গনেশ বাঁধা বিপত্তি নাশ করেন। ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভক্তরা গনেশ চতুর্থী পালন করে থাকেন।
আরো পড়ুন: শ্রাবন মাসের গনেশ চতুর্থী, জেনে নিন পূজার শুভ সময় এবং চন্দ্রোদয়ের সময়
গনেশ পূজোর প্রয়োজনীয় উপকরণ
- গনেশের মুর্তি/ছবির পট
- নতুন ধুতি
- পৈতে
- জলের পাত্র
- পঞ্চামৃত
- লাল চেলি
- অক্ষত
- এলাচ
- নারকেল
- সুপারি
- ঘি
- কপূর
- চৌকি
- গঙ্গাজল
- মিষ্টান্ন (লাড্ডু/মোদক)
- লাল ফুল, দূর্বা
গণেশ চতুর্থী 2023 পূজা বিধান (Ganesh Chaturthi 2023 Puja Vidhi)
নির্জলা উপবাস করে পূজোয় বসতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, মধ্যাহ্নে শুরু হয় সিদ্ধিদাতার আরাধনা। কারণ শাস্ত্রে বলে, ভরা মধ্যাহ্নে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গৌরীপুত্র গণেশ। মন্ত্র জপ করে ষোড়শোপচারে সিদ্ধি বিনায়কের পুজো করতে হয়।
- এই দিনে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে বাড়ির মন্দির পরিষ্কার করে ফেলুন।
- এরপর ভগবান গণেশের মুর্তি বা পটে নতুন ধুতি ও পৈতে জড়িয়ে চৌকিতে লাল কাপড় পেতে ঠাকুরকে আসনে বসান।
- এরপর যাবতীয় নৈবেদ্য সাজিয়ে দিন। কর্পূর এবং ধূপ দেখিয়ে আরতি করুন। ভোগ দেওয়ার আগে গঙ্গাজল ছিটিয়ে পরিস্কার করে নেবেন জায়গাটি।
- পুজো শুরুতেই ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে সংকল্প করতে হয়। তারপরে মন্ত্র জপ, মূর্তি প্রতিষ্ঠা, মূর্তি স্নান এবং দেবতাকে ভোগ উৎসর্গ করতে হয়।
- দূর্বা, বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিন। ভোগে লাড্ডু বা মোদক দিন। এছাড়াও 5 ধরনের শুকনো ফল, 5 ধরনের অন্য ফল দিন এবং একটি সুন্দর কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে দিন।
- যেখানে প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে সেই স্থানকে ফুল দিয়ে ঢেকে দিন এবং বিভিন্ন সাজসজ্জার সামগ্রী দিয়ে জায়গাটিকে সাজান।
- “ওম গন গণপতয়ে নমঃ” মন্ত্র দিয়ে পূজা শুরু করুন।
- বিন্দায়ক কথা, গণেশ স্তোত্রম পাঠ করুন এবং গণেশ আরতি জপ করুন।
- এই দিনগুলিতে মানুষ অবশ্যই ভজন কীর্তন করবে।
- এই দিনগুলিকে সবচেয়ে শুভ এবং পবিত্র বলে মনে করা হয় তাই যারা ভগবান গণেশকে বাড়িতে আনতে সক্ষম নন, তারা মন্দিরে গিয়ে এবং গণপতিকে লাড্ডু ও দূর্বা দিয়ে প্রার্থনা করতে পারেন।
*উল্লেখ্য, গনেশ পূজোয় কখোনোই তুলসীপাতার ব্যবহার করবেন না।
গণেশ চতুর্থী 2023 পূজা মন্ত্র
১. ওম গণ গণপতয়ে নমঃ!!
২. ওম শ্রী গণেশয়ে নমঃ!!
৩. ওম বক্রতুন্ড মহাকায়ে সূর্যকোটি সমাপ্রভা,
নির্বিঘ্নম কুরুময়দেব সর্ব কর্মেষু সর্বদা..!!
৪. একদন্তে বিদমহে বক্রতুন্ডায়ে,
ধীমাহি তন্নো দন্তি প্রচোদয়াত..!!
৫. গজাননম ভুতা গণধি সেবাতম
কপিত্থা জাম্বু পালসারা ভকসিতাম |
উমা সুতম শোকা বিনাশা করণম
নমামি বিগ্নেশ্বর পদ পঙ্কজম ||
গণেশ চতুর্থী 2023: আবাহন এবং প্রাণ প্রতিস্থা আচার
গণপতি মূর্তিকে পবিত্র করার জন্য এটি করা হয়। ‘গভীর-প্রজ্বলন’ এবং ‘সংকল্প’ করার পরে, এটি ভক্তদের দ্বারা নেওয়া প্রথম পদক্ষেপ। ভগবান গণেশকে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে শ্রদ্ধার সাথে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এইভাবে প্যান্ডেল, মন্দির বা বাড়িতে স্থাপিত মূর্তির মধ্যে জীবন বা প্রাণ প্রতিষ্টা করা হয়।
গণেশ চতুর্থী উত্তরপূজার আচার
বিসর্জনের আগে এই অনুষ্ঠান করা হয়। অত্যন্ত আনন্দ ও ভক্তি সহকারে সকল বয়সের মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। তা প্যান্ডেল, মন্দির বা বাড়িতেই হোক না কেন, গণেশ চতুর্থী অপরিসীম আনন্দের সাথে পালন করা হয়। লোকেরা গান গায়, নাচ করে এবং আতশবাজি জ্বালায়। মন্ত্র, আরতি, ফুলের সুন্দর জপ দিয়ে গণেশকে বিদায় জানাতে পূজা করা হয়। শেষে নিরঞ্জন আরতি, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে প্রদক্ষিণ করা হয়ে থাকে ।
কোন কোন রাজ্যে ধুমধাম করে পালিত হয়
গোটা ভারতের সর্বত্র অনুষ্ঠিত হয় গনেশ চতুর্থী। তবে বেশ কিছু রাজ্যে মহা সমারোহে পালিত হয় এই উৎসব। মহারাষ্ট্রে দশ দিন যাবৎ পালন করা হয়। গোয়া, কর্ণাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু,অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট ও ছত্তিশগড় রাজ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়।
শুধু ভারতই নয়, নেপালের কিছু কিছু অংশেও এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। শ্রীলঙ্কায় তামিল হিন্দুরাও এই উৎসব পালন করে থাকেন।