বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার গল্প: এই গল্প সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে শেখায় 

বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার গল্প

বহুকাল আগে যখন গুরুকুলে শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। তখন প্রত্যেক শিশুকে তার জীবনের পঁচিশ বছর গুরুকুলে কাটাতে হয়। সেই সময় একজন মহান পণ্ডিত রাধে গুপ্ত গুরুকুলে থাকতেন, যার গুরুকুল খুব বিখ্যাত ছিল। যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে শিষ্যরা শিক্ষা গ্রহণ করতে আসতেন।

এটা সেই দিনের কথা যখন রাধে গুপ্ত বৃদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন। বাড়িতে একটি বিবাহযোগ্য মেয়ে ছিল। রাধে গুপ্তা সারাক্ষণ তাকে নিয়ে চিন্তায় থাকতেন। তিনি তাকে এমন একজন যোগ্য ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যার সম্পদ নাও থাকতে পারে তবে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে, যে তার মেয়েকে যেকোন পরিস্থিতিতে খুশি রাখবে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।

একদিন তার মাথায় একটা চিন্তা এলো এবং এই সমস্যার সমাধানের চিন্তা করল যে কেন তার নিজের শিষ্যদের মধ্য থেকে একজন উপযুক্ত বর খুঁজে পাওয়া যাবে না। মেয়ের জন্য তার চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। এই কাজের জন্য তিনি জ্ঞানীদের পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সমস্ত শিষ্যদের একত্রিত করেন।

রাধে গুপ্তা সবাইকে বলেছিলেন যে তিনি একটি পরীক্ষা করতে চান যাতে সবার বুদ্ধিমত্তা জানা যায়। তিনি সবাইকে বললেন যে তিনি তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে চিন্তিত, যার জন্য তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই, তাই তিনি চান তার শিষ্য বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত অর্থ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে সাহায্য করুক। এমনকি তাদের এই জন্য চুরির পথও বেছে নিতে হবে। তবে এই একটি শর্ত মেনে চলতে হবে যাতে কেউ তাদের চুরি করতে না দেখতে পারে।

আরো পড়ুন:  আপনি কি ভয় পান ? জানুন ভয়কে দূর করার সহজ উপায় I Bhoike dur korar sahaj upay in bengali

আরো পড়ুন: নরেনের এই গল্প আমাদের কঠিন মানসিকতার পরিচয় শেখায়

পরের দিন থেকে সকল শিষ্যরা কাজ শুরু করলেন। প্রতিদিন কেউ না কেউ চুরি করে রাধা গুপ্তকে দিয়ে দিত। রাধা গুপ্ত তাদের একটি বিশেষ জায়গায় রাখতেন কারণ পরীক্ষার পরে এই সমস্ত জিনিসগুলি তাদের গুরুর কাছে ফেরত দেওয়া দরকার কারণ তিনি তাঁর শিষ্যদের সঠিক জ্ঞান দিতে চেয়েছিলেন।

সমস্ত শিষ্যরা নিজের মন দিয়ে কাজ করছিল কিন্তু তাদের একজন গুরুকুলে চুপচাপ বসে ছিলেন যার নাম রামস্বামী। তিনি রাধা গুপ্তের নিকটতম এবং প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র ছিলেন। তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রাধা গুপ্ত এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তখন রামস্বামী বললেন, আপনি পরীক্ষার শর্ত হিসেবে বলেছিলেন যে চুরি করার সময় কেউ যেন তা দেখতে না পায়।

তখন সেই শিষ্য গুরুকে বললেন এভাবে একান্তে চুরি করলেও আমাদের বিবেক তা দেখছে। আমরা এটা নিজেদের থেকে লুকাতে পারি না। এর মানে চুরি করা বৃথা। একথা শুনে রাধাগুপ্তের মুখ খুশিতে ভরে ওঠে।

সে একই সাথে সবাইকে জড়ো করে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা সবাই যে চুরি করেছিলে তা কি কেউ দেখেছে? সবাই বলে না। তখন রাধাগুপ্ত বলে, এই চুরিকে তুমি কি তোমার অন্তর থেকেও লুকিয়ে রাখতে পার? সবাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে এবং রামস্বামী ছাড়া সবার মাথা নত হয়ে গেছে।

রাধাগুপ্ত বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় রামস্বামীকে প্রকৃত জয়ী হিসাবে খুঁজে পায় এবং সবার সামনে বলে যে আমার মেয়ের উপযুক্ত স্বামী খুঁজতে এই পরীক্ষা রাখা হয়েছিল।

আরো পড়ুন:  Swami Vivekananda Motivational Story: বিবেকানন্দের এই গল্প আমাদের কঠিন মানসিকতার পরিচয় শেখায়

এইভাবে রাধাগুপ্ত তার মেয়ের সঙ্গে রামস্বামীর বিয়ে ঠিক করে। সবাই তখন খুশিতে আন্তহারা। একই সাথে, চুরি হওয়া প্রতিটি জিনিস তার মালিকের কাছে হস্তান্তর করে বিনীতভাবে সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

আরো পড়ুন: স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলার দুটি ঘটনা যা বদলে দেবে আপনার চিন্তাধারা

গল্পের মূল শিক্ষা

বুদ্ধিমত্তার এই পরীক্ষায় আমাদের শেখায় যে কোন কাজই অন্তঃস্থ থেকে গোপন থাকে না এবং অভ্যন্তরীণ আত্মই কেবল একজন মানুষকে সঠিক পথ দেখায়, তাই একজন মানুষের পক্ষে যে কোনও কাজের সঠিক বা ভুলের জন্য তার মন অনুসন্ধান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আজ মানুষ বিবেকের কণ্ঠ শোনা বন্ধ করে দিয়েছে, তাই সে ভুল পথে যাচ্ছে। আমাদের বিবেক কখনো ভুল পথ দেখায় না। এটা প্রয়োজন যে মনের কণ্ঠস্বর আমাদের এমন করার পরামর্শ দেয় যা মন কখনই গ্রহণ করে না কারণ মন সর্বদা স্বার্থে কাজ করে এবং মন আমাদের সঠিক এবং ভুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সঠিক ও অন্যায়ের এই পরিচয় আমাদের সর্বদা মন্দ থেকে দূরে রাখে। যেকোনো কাজ করার আগে অবশ্যই মনের কথা শুনতে হবে।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে রাধা গুপ্তও তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত বর খুঁজে পান এবং শিষ্যদের জীবনের অমূল্য জ্ঞান দেন। বর্তমান সময়ে যে কোন শিক্ষক ও শিক্ষাদান পদ্ধতি মানুষকে জ্ঞান দেয় শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন পর্যন্ত।

একটি শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ কোথাও হারিয়ে গেছে, আজকের মানুষ স্কুলে বড় হয়ে ধনী হওয়ার জন্য জ্ঞান নেয়, সেই শিশুটিকে সঠিক-অন্যায় সচেতন করার দায়িত্ব কেউ নেয় না, কারণ তাদের পিতামাতাও আজকাল শুধু টাকা রোজগারে ব্যস্ত আর শিক্ষকরাও শুধু বইয়ের জ্ঞান দিয়ে নিজের দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে এই ছোট ছোট গল্পগুলো মানুষকে সঠিক থেকে ভুল শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আরো পড়ুন:  Starlink কি, Internet Speed, ব্যবহার, সুবিধা। ভারতে কবে এই পরিষেবা শুরু হবে

এটি একটি গুরুতর সমস্যা যার ফলে আজকের শিশুরা সহজেই ভুল পথে হাঁটতে শুরু করে এবং তারা তখনই সচেতন হয় যখন তারা সম্পূর্ণভাবে আক্রান্ত হয়। অতএব, আমাদের সকলের আজকের প্রজন্মকে এই রকম জ্ঞানমূলক বিষয় শেখানো প্রয়োজন।

আরো পড়ুন: স্মৃতিশক্তি কি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে? স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়

Share It!

Leave a Comment