টেক প্রফেশনালদের জন্য দুঃসংবাদ: কর্ণাটক সরকার কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করতে চাইছে, আইটি ইউনিয়নগুলি বিরোধিতা করছে
সিদ্দারামাইয়া নেতৃত্বাধীন কর্ণাটক সরকার আইটি সহ কিছু খাতে দৈনিক কর্মঘণ্টা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করার প্রস্তাব করেছে, যা নিয়ে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
কর্ণাটক শপস অ্যান্ড কমার্শিয়াল এস্টাবলিশমেন্টস অ্যাক্ট, ১৯৬১-এর ধারা ৭ অনুযায়ী, বর্তমানে দৈনিক কর্মঘণ্টা ৯ ঘণ্টার বেশি এবং ওভারটাইমসহ সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টার বেশি হতে পারে না।
এছাড়াও, তিন মাসে ওভারটাইম ৫০ ঘণ্টার বেশি নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনীতে দৈনিক কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা এবং ওভারটাইম ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত করার পাশাপাশি তিন মাসে ওভারটাইমের সীমা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১৪৪ ঘণ্টা করা হতে পারে।
অন্ধ্রপ্রদেশের পদক্ষেপের পর কর্ণাটক
এই সিদ্ধান্তের আগে, তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) নেতৃত্বাধীন অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যেই দৈনিক কর্মঘণ্টা ৯ থেকে ১০ ঘণ্টায় বাড়িয়েছে, যা তারা ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের অংশ হিসেবে দেখছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রী কে. পার্থসারথি দাবি করেছেন, শ্রম আইন সংশোধন করে নারীদের জন্য রাতের শিফটে কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তবে নিরাপত্তা, পরিবহন ও সম্মতির শর্ত জোরদার করা হবে।
ট্রেড ইউনিয়নগুলির তীব্র প্রতিবাদ
কর্ণাটক সরকারের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন, বিশেষত কর্ণাটক স্টেট আইটি/আইটিএস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (কিটু), কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা এই প্রস্তাবকে “আধুনিক যুগের দাসপ্রথা” বলে আখ্যায়িত করেছে এবং সমস্ত আইটি কর্মীদের একত্রিত হয়ে এই পরিবর্তন রোধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
কিটুর নেতা সুহাস আদিগা ও লেনিল বাবু দাবি করেছেন যে এই সংশোধনী শুধুমাত্র কর্পোরেট লাভের জন্য কর্মীদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করবে। তারা বলেছেন, “এই আইন পরিবর্তন productivity-র জন্য নয়, বরং কর্পোরেট মালিকদের খুশি করতে কর্মীদের যন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা।”
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
কিটু রাজ্যের একটি সমীক্ষা উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে “স্টেট ইমোশনাল ওয়েলবিইং রিপোর্ট ২০২৪” অনুযায়ী, ২৫ বছরের কম বয়সী ৯০% কর্পোরেট কর্মী উদ্বেগ ও মানসিক চাপে ভুগছেন। দৈনিক কর্মঘণ্টা আরও বাড়ানো হলে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্ণাটক সরকারের যুক্তি vs কর্মীদের অধিকার
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে এই পরিবর্তন বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও শিল্পের উন্নতিতে সহায়ক হবে। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলি বলছে, এটি শুধুমাত্র মালিকপক্ষের স্বার্থ রক্ষা করবে, কর্মীদের কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করবে এবং বেকারত্ব বাড়াবে।
সর্বোপরি, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ভারতের আইটি খাত, যা ইতিমধ্যেই চাপের মধ্যে কাজ করে, সেখানে কর্মীদের উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সরকার শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবিকে কতটা গুরুত্ব দেয়।