ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ আসতে পারে বঙ্গোপসাগরে, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে পড়তে পারে প্রভাব

বঙ্গোপসাগরে নতুন একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ঘূর্ণিঝড়টি যদি তৈরি হয়, তাহলে এর নাম হবে ‘শক্তি’। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরের উপরিভাগে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যা পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এটি মূলত পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৬ মে থেকে ২২ মে-র মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি আকার নিতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসে বঙ্গোপসাগরের জল অনেক উষ্ণ থাকে। এই উচ্চ তাপমাত্রার জল ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। পূর্বের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এই সময় ঘূর্ণিঝড় আমফান (২০২০), ইয়াস (২০২১), মোচা (২০২3) ইত্যাদি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে। এ বছরও সেই রকম একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব

বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব অঞ্চলের নদী ও সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এই সময় ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে, যার ফলে গাছপালা উপড়ে পড়া বা ছোট ঘরবাড়ির ক্ষতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:  বজ্রপাত ও বৃষ্টির সম্ভাবনা শনিবারেও, কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গে ভিজতে পারে, তবে তাপমাত্রা বাড়বে

ভারতের আবহাওয়া দফতর (IMD) এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট সতর্কতা না দিলেও তারা পরিস্থিতি নজরে রাখছে এবং সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করছে। যদি নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চল—যেমন পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার কিছু অংশেও বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে জলস্তর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ

যদি এই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তবে এর নাম হবে ‘শক্তি’। এই নামটি শ্রীলঙ্কা প্রস্তাব করেছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) এবং ESCAP-এর ঘূর্ণিঝড় কমিটি অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলো পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মিলেই এই নামকরণের তালিকা তৈরি করে।

সাধারণ মানুষকে করণীয়

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়ার প্রতিদিনের আপডেট নজরে রাখতে বলা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলা হচ্ছে। যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশনা আসে—যেমন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া বা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া—তাহলে তা অবশ্যই মানতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে, মোবাইল নেটওয়ার্কেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আগে থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব রয়েছে নিজেদের এবং পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সরকারি ঘোষণাগুলো বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যম থেকে জানুন এবং গুজবে কান দেবেন না।

Share It!

Leave a Comment