ভারতের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে এসেছে এক অসাধারণ খবর। এখন থেকে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়স হলেই মিলবে ৫ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য বিমা এবং রেল ভাড়ায় ছাড়। উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি সরকারও বাসযাত্রা একেবারে বিনামূল্যে করে দিয়েছে।
এই নতুন পরিকল্পনার ফলে প্রবীণদের জীবনযাত্রা হবে আরও সহজ, নিরাপদ এবং আত্মনির্ভর। যারা সীমিত আয়ে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি হবে এক বিশাল উপকার। জেনে নিন কীভাবে আপনি বা আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্য এই সুযোগ পেতে পারেন।
প্রবীণদের জন্য আশীর্বাদ: সরকারের নতুন পরিকল্পনা
ভারতের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এক দারুণ খুশির খবর নিয়ে এসেছে সরকার। কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার প্রবীণদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সুবিধার ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বিনামূল্যে বা নামমাত্র খরচে ভ্রমণ ও চিকিৎসার সুবিধা। এই সুবিধাগুলি মূলত ৬০ থেকে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য।
এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হলো প্রবীণদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা রক্ষা এবং তাঁদের স্বচ্ছন্দ যাতায়াত ও চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই নতুন উদ্যোগে কী কী সুবিধা পাবেন প্রবীণরা।

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে নতুন সংযোজন: ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে সকলেই পাবে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা বিমা
আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (AB PM-JAY) প্রকল্পটি ভারতের বৃহত্তম জনস্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প। এবার এই প্রকল্পে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন থেকে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়স হলেই, কোনো আয়ের সীমা ছাড়াই, মিলবে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা বিমা সুবিধা।
আগে এই প্রকল্পের আওতায় আসার জন্য কিছু নির্দিষ্ট আয়ের শর্ত ছিল, কিন্তু নতুন নীতির আওতায় তা তুলে নেওয়া হয়েছে। যারা আগে থেকেই আয়ুষ্মান প্রকল্পের অধীনে ছিলেন, তাঁদের জন্য আরও ৫ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত টপ-আপ সুবিধাও থাকছে।
এই পরিবর্তনের ফলে প্রায় ৬ কোটি প্রবীণ নাগরিক উপকৃত হবেন। প্রতিটি প্রবীণ নাগরিককে একটি বিশেষ হেলথ কার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তাঁরা নগদবিহীন চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পারবেন যেকোনও অনুমোদিত হাসপাতালে।
ভারতীয় রেলে প্রবীণদের জন্য ভাড়া ছাড়: আবার ফিরছে সেই পুরনো সুবিধা
২০১৯ সালের আগে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ভারতীয় রেলে বিশেষ ছাড় দেওয়া হতো। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে এই সুবিধা স্থগিত করা হয়েছিল। এবার কেন্দ্র সরকার ফের সেই সুবিধা ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে।
৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষ ও ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলারা স্লিপার ক্লাসে রেলের টিকিটে ছাড় পাবেন। যদিও এখনই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি, কিন্তু সূত্র অনুযায়ী, আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এই সুবিধা চালু হলে দেশের লক্ষ লক্ষ প্রবীণ নাগরিক অল্প খরচে পরিবার পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বা তীর্থ ভ্রমণে যেতে পারবেন।
উত্তরপ্রদেশে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের জন্য বাসে ফ্রি যাতায়াত
উত্তরপ্রদেশ সরকার ঘোষণা করেছে, রাজ্যের ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলারা রাজ্য পরিবহণের বাসে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। এই প্রকল্পে বছরে প্রায় ৮৫ হাজার মহিলা উপকৃত হবেন এবং সরকারের খরচ হবে আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা।
দিল্লি সরকারের পদক্ষেপ: নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ফ্রি যাতায়াত
দিল্লি সরকারও একটি চমকপ্রদ ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, রাজধানীতে যাঁরা নিবন্ধিত নির্মাণ শ্রমিক, তাঁদের জন্য দিল্লি পরিবহণ নিগমের বাসে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি একদিকে যেমন অর্থ সাশ্রয় করবে, অন্যদিকে শ্রমিকদের কাজের গতি বাড়াবে।
এই সুবিধাগুলি কাদের জন্য প্রযোজ্য?
সুবিধা | বিবরণ |
---|---|
চিকিৎসা বিমা | ৭০ বছর বা তার বেশি বয়স হলে ৫ লক্ষ টাকার বিমা সুবিধা (আয় শর্ত ছাড়াই) |
রেল টিকিটে ছাড় | প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্লিপার ক্লাসে ভাড়ায় বিশেষ ছাড় (চলতি আলোচনাধীন) |
বাস ভ্রমণে ফ্রি যাতায়াত | উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের জন্য, দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য |
নগদবিহীন চিকিৎসা সুবিধা | একটি হেলথ কার্ডের মাধ্যমে ১০,০০০+ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া যাবে |
সুবিধা পেতে কী করতে হবে?
প্রবীণ নাগরিকদের এই সুবিধা পেতে হলে কিছু সহজ ধাপ অনুসরণ করতে হবে। যেমন:
- রেলের ছাড় বা বাসে বিনামূল্যে যাতায়াতের সুবিধার জন্য সরকারি নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে, যা প্রতিটি রাজ্য আলাদা আলাদা ভাবে ঘোষণা করবে।
- নিজের ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড দেখিয়ে বয়স প্রমাণ করা আবশ্যক।
এই উদ্যোগের গুরুত্ব কেন এত বেশি?
ভারতের একটি বড় অংশ প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত। অনেক প্রবীণ মানুষ আয়ের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না বা সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতেও দূরে যেতে পারেন না। এই সরকারি প্রকল্পগুলি তাঁদের জীবনে বাস্তব উপকার নিয়ে আসবে।
একদিকে যেমন চিকিৎসার খরচ কমবে, অন্যদিকে যাতায়াত আরও সহজ হবে। প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি সরকারের এই মনোভাব সমাজে এক ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়।
সরকারের এই নতুন উদ্যোগ প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সত্যিই এক আশীর্বাদ। চিকিৎসা, ভ্রমণ ও যাতায়াতে এতটা ছাড় খুব কম সময়েই দেখা যায়।
যদি আপনার পরিবারে ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ থাকেন, তবে এখনই তাঁদের এই সুবিধার বিষয়ে জানিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করুন। এই উদ্যোগ তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক আনন্দ—দুয়োটাই নিশ্চিত করবে।
