২০২৫ সালে রেলে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বড় সুখবর! ৫০% ছাড় আবার চালু, জেনে নিন পুরো নিয়ম

ভারতীয় রেলওয়ে ২০২৫ সালের ১ জুন থেকে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ট্রেনের টিকিটে ছাড়ের সুবিধা আবার চালু করতে চলেছে।

কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় এই ছাড় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পর এই সিদ্ধান্তে দেশের লক্ষ লক্ষ সিনিয়র সিটিজেন যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তির হাওয়া বইছে।

রেলমন্ত্রকের এই পদক্ষেপ প্রবীণদের জন্য শুধু আর্থিক সাশ্রয়ই নয়, বরং ভ্রমণে আরও উৎসাহ যোগাবে।

কাদের জন্য এই ছাড় প্রযোজ্য হবে?

রেলওয়ের নতুন ঘোষণায় বলা হয়েছে, ছাড়ের সুবিধা পাবেন—

  • পুরুষ যাত্রীরা যাদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি,
  • মহিলা যাত্রীরা যাদের বয়স ৫৮ বছর বা তার বেশি

এই বয়সের সীমা যাত্রার সময়কাল অনুযায়ী গণনা করা হবে, অর্থাৎ যাত্রার দিনে যদি কারও বয়স নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে, তবে তিনিও এই সুবিধার আওতায় আসবেন।

ছাড়ের পরিমাণ কত হবে?

ভারতীয় রেলওয়ে জানিয়েছে:

এই ছাড় স্লিপার, এসি থ্রি-টায়ার, এসি টু-টায়ার, জেনারেল ডাবলিউসি কোচ—সব ধরনের ট্রেনের শ্রেণিতে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ যারা সাধারণ বা সংরক্ষিত কোনও ধরণের টিকিট কেটে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সকলেই এই সুবিধার আওতায় আসবেন।

কীভাবে মিলবে এই ছাড়?

এই ছাড় পেতে গেলে যাত্রীদের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন:

আরো পড়ুন:  Cryptocurrency: ক্রিপ্টোকারেন্সি কি, কিভাবে এটি কাজ করে । Cryptocurrency in Bengali
  1. টিকিট বুকিংয়ের সময় ‘Senior Citizen Concession’ অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।
  2. অনলাইনে টিকিট কাটার সময় বয়সের প্রমাণ স্বরূপ Aadhaar Card বা Voter ID নম্বর দিতে হবে।
  3. অফলাইন টিকিট বুকিংয়ে অবশ্যই সরকারি স্বীকৃত পরিচয়পত্র দেখাতে হবে যেখানে বয়স পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকবে।
  4. ট্রেন যাত্রার সময়েও সেই পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক, যাতে প্রয়োজনে টিকিট পরীক্ষকের কাছে দেখানো যায়।

কেন এই ছাড় একবার বন্ধ করা হয়েছিল?

২০২০ সালে কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় ভারতীয় রেলওয়ে বেশ কিছু ব্যয়সঙ্কোচনমূলক সিদ্ধান্ত নেয়। তখন যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছিল এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নানা বিধিনিষেধ ছিল। সেই সময় সিনিয়র সিটিজেন কনসেশন সহ ৫৩টি ভিন্ন ছাড়ের ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়। রেলওয়ে দাবি করেছিল, এই ছাড়গুলোর জন্য বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হতো।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবং যাত্রী সংখ্যা ফের বাড়তে থাকায় প্রবীণ যাত্রীদের জন্য আবার ছাড় চালুর দাবি উঠছিল। অবশেষে ২০২৫ সালের বাজেট পেশের সময় এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

কত জন উপকৃত হবেন এই ছাড়ে?

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর রেলওয়ে যাত্রীদের মধ্যে প্রায় ২০% হলেন সিনিয়র সিটিজেন। এই ছাড় পুনরায় চালু হলে আনুমানিকভাবে প্রায় ৫ কোটির বেশি প্রবীণ যাত্রী উপকৃত হবেন। তাঁদের অনেকেই পেনশন বা সীমিত আয়ের ওপর নির্ভরশীল। ফলে এই ছাড় তাঁদের জন্য আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই সহায়ক হবে।

মানবিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

রেল পরিষেবা শুধুমাত্র একটি পরিবহন ব্যবস্থা নয়, বরং এটি সামাজিক সংহতির প্রতীক। প্রবীণ নাগরিকরা জীবনের একটা দীর্ঘ সময় সমাজ, পরিবার এবং দেশের জন্য কাজ করেছেন। তাঁদের জন্য এমন ছাড় দেওয়া মানবিকতার পরিচায়ক। বয়সের কারণে অনেক প্রবীণ যাত্রী অন্য পরিবহন ব্যবস্থায় ভ্রমণ করতে অসুবিধা বোধ করেন। ট্রেনে সাশ্রয়ী এবং আরামদায়ক যাত্রা তাঁদের জন্য এক বিশাল সুবিধা।

আরো পড়ুন:  Ayushman Bharat Yojana: বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নতুন দিগন্ত

বিশেষ সতর্কবার্তা

যাঁরা সিনিয়র সিটিজেনের আওতায় পড়েন, তাঁদের অনুরোধ—ভ্রমণের সময় সবসময় নিজের পরিচয়পত্র ও বয়স প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখুন। অনলাইনে যারা IRCTC-এর মাধ্যমে টিকিট কেটে থাকেন, তারা প্রোফাইলে বয়স সংক্রান্ত তথ্য আপডেট করে রাখুন।

২০২৫ সালের ১ জুন থেকে সিনিয়র সিটিজেন কনসেশন পুনরায় চালু হওয়া নিঃসন্দেহে এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এটি প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ এবং মানবিক চিন্তার পরিচয় বহন করে। ভবিষ্যতে যদি আরও সুলভ এবং প্রযুক্তিনির্ভর পরিষেবা চালু করা যায়, তাহলে প্রবীণ যাত্রীদের যাত্রা হবে আরও সহজ, নিরাপদ ও সম্মানজনক।

Share It!

Leave a Comment